নিজস্ব সংবাদদাতা : একই অঙ্গে এত রূপ! এমন অনেক মানুষই রয়েছেন যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমানভাবে পারদর্শী ও প্রতিষ্ঠিত। এমনই একজন ব্যক্তিত্ব হলেন বাবুল সুপ্রিয়। প্রথমে একজন গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বর্তমানে একজন রাজনীতিবিদও। রাজ্যের একজন মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন বটে। তবে বর্তমানে রাজ্যের শাসক দলের বিধায়ক। বালিগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এক দফতরের মন্ত্রী। মাঝে মাঝেই রাজনৈতিক সমালোচনা, বিতর্কে তার নাম জড়িয়েছে নানা ইস্যুতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পোস্টের নীচেও ধেয়ে এসেছে কটাক্ষ। তবে এবার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি ছোট্ট কাজ সেরে ফেললেন গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। মন্ত্রী বাবুল বা রাজনীতির ময়দানে যে বাবুল রয়েছেন সেই বাবুলের সমালোচনা যে গায়ক বাবুল চান না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তার ফেসবুক পোস্টে।
পুজোর মুখে আশা অডিওর একটি মিউজিক ভিডিও লঞ্চ হয়েছে। না না ভুলিনি, তার নাম। সেখানে রয়েছেন বাবুলও। সেই মিউজিক ভিডিও পোস্ট করে লম্বা চওড়া লেখা লিখেছেন গায়ক বাবুল। তবে তিনি এও জানেন যে, বড় পোস্ট বলে অনেকেই পাত্তা দেবেন না, এড়িয়ে যাবেন। গায়ক বাবুলের মূল বক্তব্য হল, যেহেতু এটা মিউজিক অ্যালবাম, গানের জগতের কোনো পোস্টের নিচে রাজনৈতিক কোনো সমালোচনা, কটাক্ষ চান না । দুটি ময়দান সম্পূর্ণ আলাদা। তাই গায়ক বাবুলের পোস্টে যেন মন্ত্রী বাবুল ট্রোলড না হন সেই ব্যবস্থাই করেছেন তিনি। কমেন্ট বক্স হাইড করে দিয়েছেন। যে কারণে পোস্টে রিয়্যাক্ট করতে পারা যাচ্ছে, শেয়ার করতে পারা যাচ্ছে, কিন্তু কমেন্ট করতে পারা যাচ্ছ না। অথচ লম্বা চওড়া পোস্টে বাবুল টেনেছেন অতীতকে। বিজেপির প্রসঙ্গও উঠেছে। উঠেছে রাজনীতির প্রসঙ্গও।
যারা গায়ক বাবুলের পোস্টে কমেন্ট করতে পারছেন না তাদের উদ্দেশ্যে বাবুল বলেছেন, তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন পোস্টের নিচে কমেন্ট অপশন বন্ধ রাখার। তার সঙ্গীত জগতের পোস্টগুলিতে তার দিকে যে সমস্ত রাজনৈতিক সমালোচনা, কটাক্ষ ধেয়ে আসবে তা তাকে যাতে শুনতে না হয়। গায়ক বাবুল মনে করেন সঙ্গীত এবং রাজনীতি দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্ম। তাই আলাদা রাখা উচিত। কিন্তু তাও কেউ কেউ ক্ষেত্র বিবেচনা না করেই ট্রোল করতে শুরু করে। তিনি এও বলেছেন যে তিনি যা করেন তাতে কারো বৈধতার প্রয়োজন নেই। তিনি একজন নাস্তিক।জ্যোতিষশাস্ত্রেও বিশ্বাসী নন। ফলে যা করেন নিজ দায়িত্বে করেন। বিজেপির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি যখন বিজপিতে ছিলেন রাজনৈতিক কারণে যাদবপুরে তাকে মারধর করা হয়েছিল। বিনা দোষে সম্প্রদায়িক তকমা দেওয়া হয়েছিল। বাবুল বলেন, তার একটা মন্ত্র আছে। হাতে যে কাজটা আছে সেটা করার জন্য নিজের সেরাটাও দাও। তিনিও তাই চেষ্টা করেন করতে। বাবুলের কথায়, ''যখন আমি গান করি, তখন আমি আমার শ্রোতাদের খুশি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি । কখনই সত্যিকারের অর্থে কোনও ফ্লপ শো করিনি। আসানসোলে, আমি এখনও তাদের এমপি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কাজের জন্য পছন্দ করে। বালিগঞ্জে মাঝে মাঝে 'গোলমাল' হয়। তবে আমি এর থেকে দূরে থাকি এবং বিষয়গুলি নিজে থেকেই সমাধান হয়ে যায়।'' বাবুলের পোস্টে উল্লেখ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। বাংলার জন্য কাজের পরামর্শ তিনিই দিয়েছিলেন রাজনৈতিক অবসরের পথে তাকে হাঁটতে না দিয়ে, মনে করান বাবুল।
বাবুলের সাফ কথা ''কেউ যদি রাজনৈতিক বাবুলকে পছন্দ না করেন তবে ঠিক হবে যে আমরা আলাদাভাবে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি বিশেষ করে যখন আমি স্বীকার করি যে আমি ঘৃণা ও প্রতিশোধের কথা মাথায় রেখে বিজেপি ছেড়েছি। আমি আমার আগের দলের কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি এবং মোদি সরকারের অংশ থাকাকালীন যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছিল সে সম্পর্কে নীরব ছিলাম।''
বিজেপিতে থাকাকালীন পুরনো অনেক কথাই পোস্টে টেনে আনেন গায়ক বাবুল। শেষে আবার মনে করিয়ে দেন, ''আমার বিনীত অনুরোধ, আসুন মিউজিক সেলিব্রেট করি।'' রাজনীতির কথা রাজনীতির আঙিনায় করার অনুরোধ করেন। গায়ক বাবুলের পোস্টের কমেন্ট বক্সে নয়। একেবারে শেষ বাবুল লেখেন, ''রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও আপনাদের সকলের ভালবাসা ও আশীর্বাদ চাই।''