নিজস্ব সংবাদদাতা : বাড়ির একটাই সদর দরজা। বাড়ির নাম হাকিমপেয়ারা। বাড়ির দু'জন মালিক। একজন হাকিম উদ্দিন আরেকজন পেয়ারা সিং। 'একতাই সত্য' এই মূল্যবান কথার জলন্ত উদাহরণ কাঁকসায় হিন্দু-মুসলিম দুই ধর্মের মানুষের একসাথে বসবাস।
৬৫ বছর আগে কাঁকসার পানাগড়ে এসেছিলেন বিহারের ভাগলপুরের হাকিম উদ্দিন আর পাঞ্জাবের পেয়ারা সিং। তাঁরা গাড়ির ইঞ্জিন মেরামতের শ্রমিকের কাজে যোগ দেন । ধীরে ধীরে দু'জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। দুই বন্ধু মিলে জায়গা কিনে তৈরি করেন একটি বাড়ি। ভেদাভেদ ভুলে বন্ধুত্ব যাতে অটুট থাকে সেই জন্য বাড়ির নাম দেন হাকিম-পেয়ারা। বাড়ির সদর দরজাও করেন একটি। আর সেই বাড়িতেই তারা ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীকালে পরিবার-পরিজনকেও নিয়ে আসেন তাদের তৈরি বাড়িতে। তারপর থেকে একে অপরের আনন্দ ভাগ করে নিতেন। বসন্ত উৎসব থেকে রামনবমী, আরও হিন্দুদের নানান অনুষ্ঠানেও যেমন সামিল হতেন হাকিম উদ্দিন তার পরিবারকে নিয়ে। তেমনি ঈদ সহ মুসলিমদের নানান অনুষ্ঠানেও মেতে উঠতেন পেয়ারা সিং তার পরিবারকে নিয়ে। দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে অনেকদিন আগে তারপরেও অটুট রয়েছে দুই পরিবারের বন্ধুত্ব। তাদের ছেলেরা সামলাচ্ছে ব্যবসা। এখন মো: মুস্তাক আর জাক্তার সিং সেই বাড়ি থেকেই দিচ্ছেন সম্প্রীতির বার্তা। রামনবমীর আগে এই বার্তা যে নজিরবিহীন তা বলছেন এলাকার মানুষেরাই। মো: মুস্তাক উদ্দিন বলেন,"কেউ বলেন না যে এ হাকিম উদ্দিনের ছেলে আর ও পেয়ারা সিংয়ের ছেলে। সবাই বলে এরা হাকিমপেয়ারার পরিবার। ভারতবর্ষ তো সম্প্রীতির দেশ। একে অপরের অনুষ্ঠানে সামিল হব আনন্দ করবো এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করি একটাই সদর দরজা দিয়ে। আমরা চাই সারা দেশের মানুষের মধ্যেও আমাদের মত সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটুক।" পেয়ারা সিংয়ের ছেলে জাক্তার সিং বলেন,"দুটো জাতির একটাই বাড়ি। সারা বিশ্বে কোথাও এরকম বাড়ি আছে বলে মনে হয় না। আমাদের বাড়ির বিশেষত্ব এটাই। আমরা মিলেমিশে থাকি। আমাদের বাড়ির দিকে তাকালে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা তৈরি হয়।"
/anm-bengali/media/media_files/2025/04/06/uUhGQ7UH11hTueTdrSHW.jpeg)
স্থানীয় বাসিন্দা হরজিৎ সিং বলেন,"পানাগড়ের বুকে এই রকম সম্প্রীতি দেখে নিজেদেরও গর্বিত মনে করি। বন্ধুত্বের এতটাই শক্তি দু'জনের নামও মানুষ কোনদিন ভাগ করতে পারবে না। এইরকমই সারা পৃথিবী জুড়ে হওয়া দরকার।"