নিজস্ব সংবাদদাতাঃ জিনাতের পর এবার যমুনা। জানা গিয়েছে, উড়িষ্যার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে নতুন জায়গার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল বাঘিনী যমুনা। বেলপাহাড়িতে এই ঘটনা এই মুহূর্তে বন দফতরের কর্মীদের চিন্তায় ফেলেছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, জিনাত এবং যমুনা উভয়কেই আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের তাডবা অন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে।
আড়াই বছর বয়সী যমুনা গত ১৫ ডিসেম্বর সিমলিপাল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কুলডিহা ওয়াইল্ড স্যাংচুয়ারির দিকে চলে যায়। অন্যদিকে জানা যায় যে, যমুনাকে আনা হয়েছিলো গত ৯ নভেম্বর এবং তাকে ছাড়া হয় জনাবিলের কোর এড়িয়ায়। সিমলিপাল বাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের ডিরেক্টর প্রকাশ চাঁদ গোগিনানি ব্রাঘ্রপ্রকল্প থেকে যমুনার বেড়িয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও, তার গতিবিধি সম্পর্কে কোনও কথা বলতে নারাজ। তবে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, উড়িষ্যার সিমলিপালের টাইগার রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে বেরিয়ে এবার সেই বাঘ বাংলার বেলপাহাড়ি থানার শীমূলপাল এলাকায় এসে হাজির হয়েছে। এছাড়াও, বেলপাহাড়ি থানার বাংলা, ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী গোটাশিলা পাহাড় লাগোয়া কোটাচুয়া জঙ্গলে এই মূহুর্তে বাঘিনী যমুনার অবস্থান লক্ষ্য করা গিয়েছে।
সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে যে, শীমূলপাল অঞ্চলের জোড়মা, বিরমাদল, শাখাভাঙা, জাম্বনী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। বন দফতর এবং পুলিশের তরফ থেকে সতর্ক করে এলাকায় মাইকিংও করা হচ্ছে। ঝাড়খন্ডের ঘাঘরা, পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, উভয় রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামবাসীদেরও জঙ্গলে কাঠপাতা কুড়াতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাঘের গতিবিধি নজরে রাখতে এলাকায় মোতায়েন রয়েছেন বন দফতরের কর্মীরা। বাঘটিকে ধরতে এলাকায় খাঁচা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে যে, ইতিমধ্যে উড়িষ্যা রিজার্ভ ফরেষ্টের এসটিআর টিমও পৌছে গিয়েছে ওই এলাকায়। যৌথভাবে নজরদারি করা হয়েছে এলাকাটিতে।
অন্যদিকে, জানা গিয়েছে যে, কাটচুয়ার জঙ্গল থেকে ঝাড়খন্ডের দিকে আরো প্রায় ১০ -১২ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েছে বাঘিনী জিনাত। ঝাড়গ্রাম বনাঞ্চলে ঢুকে পড়া বাঘিনীর খোঁজে এখন জোর তল্লাশি চলছে ময়ুরঝর্ণা ও কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলে। জানা গিয়েছে, আজ সকাল ৬ টায় শেষবার তার রেডিও কলার লোকেশান পান বন দফতরের কর্মীরা। তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। একই সঙ্গে বাংলা, ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা তিন রাজ্যের বন দফতরের কর্মীরা তন্নতন্ন করে বাঘিনীর খোঁজ চালাচ্ছে ময়ুরঝর্ণা ও কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলে। রেডিও কলার ট্র্যাকার এন্টেনা নিয়ে ৬ টি টিম জঙ্গলে তল্লাশি চালাচ্ছে, এর পাশাপাশি এলাকায় চলছে সতর্কতা ঘোষণা। জঙ্গলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদেরও বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় এলাকার জঙ্গলে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন দফতর।
অন্যদিকে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে আতঙ্ক। প্রায় ৪০ ঘন্টা অতিক্রম হয়েছে, কিন্তু এখনো অধরাই রয়েছে বাঘিনী যমুনা। বাংলা ও ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে আতঙ্ক গ্রাস করছে। যার জেরে ব্যহত হয়েছে জনজীবন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।যদিও গ্রামের মানুষকে সতর্ক করেছে বনদপ্তর। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বেলপাহাড়ির চিড়াকুটি শনিবারের সাপ্তাহিক হাটেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সেখানে বিক্রেতার সংখ্যা থাকলেও, ক্রেতার সংখ্যা অনেকাংশেই কম। বাঘের আতঙ্কে হাটে নেই খদ্দের, তাই তাড়াতাড়ি বাড়িমুখো হতে চান হাটের মানুষজন।