নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা রেলস্টেশনের কাছে সবরমতী এক্সপ্রেসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জনের। সেই ঘটনার জেরে গুজরাটজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দাঙ্গা। ২৩ বছর পর, মার্কিন পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনাকে ‘অকল্পনীয় দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, পরবর্তী সময়ে রাজ্যে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটিও অত্যন্ত দুঃখজনক।
গুজরাটের অতীত ও সহিংসতার ইতিহাস তুলে ধরলেন মোদী
প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। ফ্রিডম্যানের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, ২০০২ সালের আগে গুজরাটে প্রায় ২৫০টিরও বেশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি, ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা কিংবা ছোটখাটো দুর্ঘটনার জেরেও সংঘর্ষ বেধে যেত। তিনি ১৯৬৯ সালের দাঙ্গার কথা উল্লেখ করে জানান, সেই সময় গুজরাটে প্রায় ৬০ দিন ধরে হিংসা চলেছিল।
গোধরার ঘটনার আগের কয়েক মাসে দেশ ও বিশ্বজুড়ে একাধিক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল বলে জানান মোদী। তিনি বলেন, "১৯৯৯ সালে ভারতীয় বিমান অপহরণ করে কান্দাহারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে আমেরিকায় ৯/১১ হামলা হয়। একই বছর ১ অক্টোবর জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় জঙ্গি হামলা এবং ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলা হয়েছিল। সেই সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, যেকোনো ছোট ঘটনা থেকেই বড় অশান্তি সৃষ্টি হতে পারত।"
গুজরাটের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত ভুজ তখনও পুনর্গঠনের পথে হাঁটছিল। এমন পরিস্থিতিতেই ২০০১ সালের অক্টোবরে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন মোদী। প্রশাসনিক কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, "কখনো নির্বাচনেও লড়িনি। ২০০২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিধায়ক নির্বাচিত হই। মাত্র তিন দিন বিধানসভায় উপস্থিত থাকার পরই ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরার ঘটনার খবর পাই।"
/anm-bengali/media/media_files/2025/03/16/nUwLpuQCCG1A0FiCTjWn.JPG)
গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে নিজের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শেষপর্যন্ত আদালতে ন্যায়বিচার হয়েছে বলে জানান তিনি। মোদীর কথায়, "আমাকে আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। প্রকৃত দোষীদের বিচার হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "গুজরাট হিংসাকে সবচেয়ে বড় দাঙ্গা বলা হয়, কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ২০০২ সালের পর গত দুই দশকে গুজরাটে একটিও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেনি।"
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নতুন করে গোধরা কান্ড ও গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিতর্ক উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।