নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পেঁয়াজ একটি অর্থকরী ফসল। শীত ও বর্ষার খোলা বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। তবে চলতি বছরে আকাশছোঁয়া পেঁয়াজের দাম উঠলেও চাষিরা ন্যায্য দাম পাননি। মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক চাষিই কিলো পিছু সাত টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন। বাজারে এমন চাহিদা দেখে এবার তাই আগে ভাগেই পিঁয়াজ চাষ করতে শুরু করেছেন জেলার অধিকাংশ চাষি। কেজি পিছু ১৭ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সেই পেঁয়াজ। তবে সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমানে উন্নত মানের পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য জেলা কৃষিদপ্তর পেঁয়াজ চাষিদের উৎসাহ দিচ্ছে। প্রয়োজনে নানা পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। উন্নত জাতের পেঁয়াজ হল, যথাক্রমে সুখসাগর, উন্নত রবি, পুসা, রত্না, পুসা রেড, রেড গ্লোব, পুসা মাধুরি, পুসা প্রগতি, রেড রাউন্ড, নাসিক রেড, পুসা হোয়াইট ইত্যাদি। এর মধ্যে উন্নত খারিফ প্রজাতিগুলির মধ্যে হল এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড, অর্ক কল্যাণ, বসন্ত-৭৮০। আর হাইব্রিড প্রজাতির রাজা রেড, অর্ক কীর্তিমান, অর্ক লালিমা, সিওল রেড, এমওএইচ-২ ইত্যাদি। চারা তৈরি করার জন্য প্রতি একর জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোগ্রাম বীজ বুনতে হবে। সেই বীজ থেকে যে কন্দ উৎপন্ন হবে সেখানে প্রতি একর জমিতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোগ্রাম পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। ভাল করে জমি চষে নেওয়ার পর ছ’ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি দূরত্বে একটি করে বীজ বুনতে হবে। জমিতে যেন কোনও আগাছা না থাকে সে ব্যাপারে পেঁয়াজ চাষিদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। জমি তৈরির সময় একর প্রতি চার টন জৈব সার, ৬ কিলোগ্রাম অ্যাজোটোব্যাক্টর এবং পিএসবি (ফসফেট ব্যাকটেরিয়া) প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার হিসেবে উন্নত জাতের জন্য একর প্রতি মূল সার ৩০ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন, ৪০ কিলোগ্রাম ফসফরাস ও ৩০ কিলোগ্রাম পটাশিয়াম। এছাড়া 'চাপান' সার হিসেবে ৩০ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন এবং ৩০ কিলোগ্রাম পটাশিয়াম চারা লাগানোর ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। তবে, ঘাটতিযুক্ত মাটিতে একর প্রতি ৬ কিলোগ্রাম সালফার, ১০ কিলোগ্রাম জিঙ্ক সালফেট, চার কিলোগ্রাম কেজি বোরক্স ও ২০০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম মলিবডেট জৈব সার একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে অনুখাদ্য প্রয়োগ করলে প্রতি তিন থেকে চারটি ফসলে একবার প্রয়োগই যথেষ্ট। প্রয়োজনে পাতায় স্প্রে করার জন্য অনুখাদ্যের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে দু’গ্রাম খুব ভাল করে গুলে চারা বসানোর এক থেকে দেড় মাসের মাথায় পাতার উপর প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের চার মাস পর থেকেই ফলন তোলা সম্ভব। বড় পেঁয়াজ হেক্টর পিছু ১২ থেকে ১৪ টন এবং ছোট পেঁয়াজ হেক্টর পিছু আট থেকে ১০ টন নিয়ম মেনে চাষ করলে উৎপন্ন হওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে ফসল তোলার সময় বৃষ্টির জল উৎপাদিত ফসলের ক্ষতি করতে পারে। বৃষ্টির জলে পেঁয়াজ গাছের গোঁড়া পচে যায়। আবহাওয়া শুকনো হলে সেই পিঁয়াজ ভাল থাকে। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করলে সহজেই ফলন পাওয়া যাবে।
ফলন বাড়াতে পেঁয়াজ চাষের সহজ পদ্ধতি
New Update