নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: ফের মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কালো তালিকাভুক্ত বিষাক্ত স্যালাইন। তাও আবার হাসপাতালের ভেতরে থাকা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে বিক্রি হলো। রোগীর পরিবারের লোকেরা কিনে নার্সদের হাতে দিতেই নার্সরা স্যালাইন চালানোর আগে ধরে ফেললেন সেই ফাঙ্গাস মিশ্রিত বিষাক্ত স্যালাইন। সঙ্গে সঙ্গে চোখ কপালে। দ্রুত সেই স্যালাইন দোকানে ফেরত দিতে নির্দেশ দেন পরিবারের লোকজনদের। পরিবারের লোকেরা জানালেন, "হাসপাতালের ভেতরে থাকা ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান থেকেই তা বিক্রি করা হয়েছে।" তারপরেই সেই স্যালাইনের বোতল নিয়ে গিয়ে মেদিনীপুর হাসপাতালের সুপারের রুমে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বাম যুবকর্মীরা। ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালেই প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে সাহসপুর এলাকার বাসিন্দা সুদীপা দলুইকে ভর্তি করা হয়েছিল মেদিনীপুর হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে। এরপরেই চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেইমতো বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী রোগীর পরিবারের লোকেরা হাসপাতাল চত্বরে থাকা ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে স্যালাইন কিনে নিয়ে গিয়ে নার্সদের দিয়েছিলেন। তারমধ্যে বেশ কিছু স্যালাইন ছিল। নার্সরা তা দেওয়ার আগে পরীক্ষা করতেই দেখা যায় সেই স্যালাইনের ভেতরে ছত্রাক রয়েছে, যে বিষাক্ত বিতর্কিত স্যালাইন সেই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে দোকান থেকে। দ্রুত তা পরিবারের লোককে দোকানে ফেরত দিয়ে আসতে নির্দেশ দেন নার্সরা। তখনই পরিবারের লোকেরা তা দোকানে নিয়ে যায়।
ঘটনার খবর সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতাল সুপারের রুমে সেই স্যালাইনের বোতল নিয়ে এসে চড়াও হয় বাম যুবরা। তুমুল বিক্ষোভ উত্তেজনা তৈরি হয় সেখানে। ওই সময় হাসপাতাল সুপার উপস্থিত ছিলেন না। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে দীর্ঘক্ষণ। ফের উত্তেজনা তৈরি হয় বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। তবে এই ঘটনার পর নিজের ভুল স্বীকার করেছেন ন্যায্য মূল্যের দোকানে থাকা কর্মী। যে স্যালাইন পুরোপুরি ব্যান করা হয়েছে রোগীর মৃত্যুর পরে, কিভাবে সেই স্যালাইন তিনি দিলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দোকানের ঐ কর্মী বলেন, "প্যাকেটের মধ্যে থাকায় তা বুঝতে পারিনি।" উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতেই হাসপাতাল চত্বরের মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী। পাশাপাশি অসুস্থ পাঁচ প্রসূতির মধ্যে মামণি রুইদাস মারা গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার মারা গেল এক সদ্যোজাত। যদিও তার মা এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে জেনারেল বেডে। কিন্তু বাঁচানো গেল না তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে। জুনিয়র ডাক্তারদের অস্ত্রোপচার, স্যালাইন কাণ্ডের আবহে যে পাঁচ প্রসূতি বারবার শিরোনামে উঠে আসেন, সেই তালিকায় ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা রেখা সাউ। এক সপ্তাহ আগে রেখার কোল আলো করে এসেছিল একটি শিশু। জন্মের পর থেকেই সে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিল। দীর্ঘ লড়াই থামল বৃহস্পতিবার।