নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তর-পূর্ব ভারত এবং পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একসময় আস্তানা জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদ্যাশ্রম ছিল। সে সময় এই আশ্রম ছিল পূর্ব বঙ্গের সাথে যুক্ত। দেশ স্বাধীনের আগে আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে স্বদেশী আন্দোলনকারীদের আস্তানা হিসেবে ধূপগুড়ির প্রত্যন্ত নিরিবিলি এই গ্রামেই আখড়া গড়ে তুলেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত।
স্বাধীনতার আগে বিপ্লবীরা গা ঢাকা দিতেন এখানে এসে আর তাদের হাতেই তৈরি হয় এই বিদ্যাশ্রম। আস্তানায় ছিলেন শান্তি রঞ্জন চক্রবর্তী, রাখাল চন্দ্র দে, কুমারেশ ঘোষ, যাত্রামোহন দাসের মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। সে সময় এখানে তাঁত বোনা হত। তাঁরা সেই তাঁতের কাপড়ই তারা পরতেন। পাশাপাশি এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে গ্রাম স্বরাজ করার জন্য তাদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা ছিল। এখনও এই বিদ্যাশ্রমে রয়ে গেছে অতীতের সেই নিদর্শনগুলি। রয়েছে চরকা, তাঁতঘরসহ অনেক কিছু।
তবে, সময়ের প্রবাহে এখন দেওয়ালে ধরেছে ফাটল, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহাসিক এই আস্তানা। কিন্তু, এখনও এই আশ্রম আগলে রেখেছেন গৌরী ঘোষ। পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষিত করতে আশ্রমে খোলা হয় হরিজন স্কুল। ১৯৮৫ সালে গৌরী দেবী শিক্ষিকার কাজের জন্য সুদূর কলকাতার মধ্যমগ্রাম থেকে এখানে আসেন। আশ্রমকে ভালবেসে তিনি আর ফিরে যাননি। ২০২২ সালের ৬ই জুন ধূপগুড়ির তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়িকার হাত ধরেই এই বিদ্যাশ্রমের একটি ঘরকে সরকারি অনুদানের আওতায় এনে তৎকালীন তাঁত বোনার যন্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, তাম্রপত্র এমনকি বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক মজুদ করে রাখা হয়েছে। গৌরী দেবীসহ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই আশ্রমকে। সরকার যদি আরও একটু রক্ষণাবেক্ষণ করে তাহলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি এটিও একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।