ঝাড়গ্রাম: নাবালিকা স্ত্রীকে আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া স্বামীকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলো ঝাড়গ্রাম আদালত। বাঁকুড়া জেলার খাতড়া থানার অন্তর্গত একটি গ্রামের ষোড়শ বর্ষিয়া এক নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় থানার লছিপুর গ্রামের গণেশ সিংহ-এর সাথে। বিয়ের পর গণেশের বাড়িতেই স্ত্রী হিসাবে সংসার করতে থাকে সে। কিন্ত সংসারের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই। গণেশ আর তার বাবা মা-এর অকথ্য অত্যাচারে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার জীবন। বাপের বাড়ির সাথেও বন্ধ করে দেওয়া হয় যোগাযোগ। এরই মধ্যে গর্ভবতী হয়ে পড়ে সে। মেয়ের এই অবস্থায় তার সাথে যোগাযোগ করার কাতর আবেদন জানান নাবালিকার বাবা। কিন্তু এতে মন গলেনি গণেশের। বেড়েছে অত্যাচারের পরিমাণ। গত ২৬.০৪.২০২৪ তারিখে শ্বশুর বাড়ির নজর এড়িয়ে কোনোভাবে বাবার সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটি। অত্যাচারের কথা বলতে বলতেই হঠাৎ ওপার থেকে কেটে দেওয়া হয় ফোন। আর মেয়েকে ফোনে পাননি বাবা। তারপরের দিন গণেশ শশুর বাড়িতে জানায় যে মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তারপরেই লালগড় থানা থেকে মেয়ের আত্মহত্যার কথা জানতে পারেন বাবা মা। বুঝতে অসুবিধা হয়নি মেয়ের ওপর গণেশ ও তার পরিবারের অকথ্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা, যা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল হতভাগিনী।
নাবালিকার মা-এর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে লালগড় থানা। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত গণেশ সিংকে। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা, পকসো সহ একাধিক ধারায় শুরু হয় মামলা। তদন্তের ভার দেওয়া হয় লালগড় থানার এসআই স্বপন কুমার সেনকে। তদন্ত শেষে দ্রুত ঝাড়গ্রাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী অফিসার।
শুরু হয় বিচার পর্ব। কেস শুরু হওয়ার ১ বছরের মধ্যেই শুক্রবার নাবালিকা স্ত্রীকে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত স্বামী গনেশ সিংকে দোষী বলে ঘোষণা করে ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত। শনিবার ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় এডিজে কোর্ট -এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক দোষী সাব্যস্ত হওয়া অভিযুক্ত গণেশ সিংকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। যার ফলে তদন্তকারী অফিসারের নিখুঁত তদন্ত এবং ট্রায়াল মনিটরিং সেলের তৎপরতাকে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কুর্নিশ জানানো হয়।