নিজস্ব প্রতিনিধি, খড়গপুর: কেউ বসবাস করছেন ৫০ বছর ধরে, কেউবা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। হঠাৎই উচ্ছেদ নোটিশ রেলের। তাতে লেখা, "১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলুন। নাহলে রেলের তরফে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।" বৃহস্পতিবার বিকেলে 'রেল শহর' খড়গপুরের ২৬নং ওয়ার্ডের পাঁচপীর এলাকায় ঠিক এমনই উচ্ছেদ নোটিশ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল। খবর পেয়েই দলবল নিয়ে পৌঁছন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক ও MKDA-র ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার। প্রদীপ পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান এবং বর্তমানে ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। সোজা ওই সমস্ত বাড়িগুলিতে গিয়ে প্রদীপ উচ্ছেদের নোটিশ কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে দেন। প্রদীপের সঙ্গে এদিন ছিলেন ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোহন দাস, ২৬নং ওয়ার্ডের তৃণমূল নেত্রী প্রিয়াঙ্কা সী প্রমুখ। পরে পৌঁছন স্থানীয় সিপিআইএম নেতারাও।
শুক্রবার সকালে বাসিন্দারা দাবি করেন, "আমরা কেউ ৫০ বছর, কেউ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। হঠাৎই কালকে এসে এই নোটিশ চিটিয়ে দিয়ে যায়। বলে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই জায়গা খালি করে দিতে হবে!" গৃহবধূ কবিতা চক্রবর্তী, শম্পা পাত্ররা বলেন, "সামনেই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা। আর এখন এসে বলছে বাড়ি খালি করে দিতে হবে। আমরা কোথায় যাব এখন? আমরা জিজ্ঞেসও করেছি, বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমরা কোথায় যাব? ওরা বললো, তা জানি না।" তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, "মামা বাড়ির আবদার নাকি? যখন তখন এসে রেলের এই সব হুজ্জুতি চলবে না। কখনও ২৭নং ওয়ার্ডে গিয়ে বসতিবাসীদের বাংলাদেশী বলা, কাউন্সিলরের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা, কখনও উচ্ছেদের নোটিশ। কে দিয়ে গেছে এই নোটিশ? কোনও স্বাক্ষর নেই। ভূত দিয়ে গেছে না রেল? তাই, ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি ওই সমস্ত নোটিশ।" তাঁর আরও দাবি, "মুখ্যমন্ত্রী বলে গেছেন (২০২৪ সালে মেদিনীপুরে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে), খড়গপুরে রেলের এই সমস্ত অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। আমরা তাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দেব। দেখি কে জেতে, মানুষ না রেল।" প্রদীপের আরও দাবি, "উচ্ছেদের নোটিশ দিতে গেলেও একটা প্রসেস আছে। মহকুমাশাসক, জেলাশাসককে জানাতে হবে। কোথাও কিছু নেই। আমরা আন্দোলন করলে, রেলের তরফে আশ্বস্ত করে আন্দোলন তুলে দেওয়া হয়। আর গোপনে এসে এই সব নোটিশ দিয়ে যায় ওরা।" রেলের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে সিপিআইএম-ও থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতৃত্বরা। অপরদিকে, এলাকার (২৬নং ওয়ার্ডের) কাউন্সিলর বিজেপি-র অনুশ্রী বেহারার কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও, স্থানীয়দের দাবি, "কাউন্সিলরকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।"
অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দু'দিন আগেই সাউথ সাইড এলাকায় এডিআরএম মনীষা গোয়েলের সঙ্গে ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোহন দাসের ব্যাপক ঝামেলার কথা। ঘটনাচক্রে তার দু'দিন পরেই এল রেলের এই উচ্ছেদ নোটিশ।