নিজস্ব সংবাদদাতা, হুগলীঃ গুড়াপে শিশু কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল চুঁচুড়া আদালত। জানা গিয়েছে, ১৩ দিনে চার্জশিট ৫৪ দিনে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হল চুঁচুড়া পকসো কোর্টে। জানা গিয়েছে, হুগলি গ্রামীন পুলিশের সদর সিঙ্গুরের কামারকুন্ডুতে সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন। পুলিশ সুপার বলেন, ' শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং ছিল মামলাটা। ঘটনার পর দিন সিট গঠন করা হয়। খুব দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত হয়েছে। প্রসিকিউশান যে ভাবে কাজ করেছে, যার ফলে খুব দ্রুত এই মামলার বিচার দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ' শিশুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুকে ফিরিয়ে দিতে পারব না, কিন্তু সঠিক বিচারে তারা মানসিক শান্তি পাবেন। '
এই মামলার সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গাঙ্গুলী বলেন, ' দিন রাত এক করে তদন্ত করেছে পুলিশ। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এই মামলা কতটা কঠিন ছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে এফএসএল এর সাক্ষি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে সোয়াব নেওয়া হয়েছিল সেখানে ক্রমোজম পাওয়া যায় অভিযুক্তের। এটা এই মামলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল শিশুকে, তার তথ্য প্রমাণ যা দাখিল করা হয়েছে তাতে সর্বচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য ছিলো। লিগাল সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রশান্ত কুন্ডু ছিলেন আইনজীবী, কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না।
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, নির্যাতিত শিশু কন্যার জন্ম হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারীতে। বেঁচে থাকলে আজ তার ছয় বছরের জন্মদিন পালন করা হত। তাই এক দিকে খারাপ লাগা এবং ভালো লাগা দুটোই আছে। আজ তাঁর জন্মদিনে বড় সাজা হলো অভিযুক্তের। জানা গিয়েছে, গত ১৫ ই জানুয়ারি অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেছিল পকশো আদালত। ঘটনার ৫৪ দিনে মধ্যে অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল পকশো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী। অল্প দিনের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ায় সভাপতি খুশি নির্যাতিতা শিশুর পরিবার। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন ,ধর্ষণ, তথ্য প্রমাণ লোপাট, অপহরণসহ একাধিক ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অভিযুক্তকে আদালতে নিয়ে যাবার পথে দোষী, ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয় গ্রামবাসীরা সাজা ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে প্রতিবেশীরা।
উল্লেখ্য , গত ২৪ শে নভেম্বর গুড়াপ থানা এলাকার পাঁচ বছরের এক শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী পৌঢ় অশোক সিং এর বিরুদ্ধে। অশোক পেশায় ঢাক বাজাতো ও রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। মেয়ে মাংস খেতে চাওয়ায় তার বাবা বাজার থেকে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজা খুঁজির পর অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানিয়ে দেয় মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। পরদিন শিশুর ময়নাতদন্ত করা হয় কলকাতায়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য হুগলী গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সির নেতৃত্বে বিশেষ টিম গঠন করে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন। ২৬ শে নভেম্বর ঘটনাস্থলে আসে রাজ্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞরা।
শিশুর মা বাবা জানান , ' এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। আজ মেয়ের জন্মদিন আর এই জন্মদিনেই এই রায় শুনিয়েছে আদালত। পুলিশ প্রশাসন খুব ভালো কাজ করেছে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। '