ডালিয়া ফুল চাষের সহজ পদ্ধতি

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
ডালিয়া ফুল চাষের সহজ পদ্ধতি

নিজস্ব সংবাদ্দাতাঃ 'ডালিয়া' বাঙালির এক পছন্দসই ফুল। শোভাবর্ধনকারী এই ডালিয়ার প্রায় ৪২ টি প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে সংকর প্রজাতির গাছগুলো সর্বাধিক দেখতে পাওয়া যায়। এর উন্নত জাত গুলোর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন ,ফাওয়ার্ড, পিওনি-ফাওয়ার্ড, কলারেট, ফরমাল ইত্যাদি। ডালিয়া চাষের জন্য ভাল মানের দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটির প্রয়োজন হয়। যে মাটিতে জল আঁটকায় না এমন মাটি নির্বাচন করতে হবে। ডালিয়া গাছ একটি রসালো জাতীয় গাছ, যার প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মাটিতে কোনওভাবেই জল আঁটকে থাকতে পারবেনা। মাটি শুকিয়ে গেলে তা আবার ভিজিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। বৃক্ষপ্রেমীরা যদি প্রচুর ফুল চান ডালিয়া গাছে, তবে অবশ্যই চাষের জায়গাটি রৌদ্রোজ্জ্বল হতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে এই ফুলগাছ রাখলে, তার থেকে বেশি ফুল পাওয়া যাবেনা। তাই যে স্থানেই গাছ রোপণ করা হবে, খেয়াল রাখতে হবে যে এর জল নিষ্কাশন ব্যাবস্থা যেন ভালো থাকে। তা নাহলে জল জমে গাছে ফাংগাস হবে এবং জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে গাছ মারা যাবে। চারা রোপণ ও সার প্রয়োগে ফুলের চারা পশ্চিমবঙ্গে, বাংলার আশ্বিন কার্তিক মাসে আর ইংরেজির সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসের দিকে রোপণ করতে হয়। এর পরেও অবশ্য চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের ক্ষেত্রে যদি টবে চারা লাগানো হয় তবে অবশ্যই সর্বনিম্ন ৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ১০/১২ ইঞ্চি টবও নেওয়া যেতে পারে। আর যারা মাটিতে চাষ করতে চান তারা চারা রোপণের ১৫ দিন আগে থেকে ৮-১০ ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে গর্ত প্রস্তুত করবেন। তারপর মিশ্রণটিতে ৪ ভাগের ২ ভাগ মাটি, ১ ভাগ বালি ও ১ ভাগে গোবর সার, হাড়ের গুঁড়ো ১ চামচ, সাথে নিমের খোল ১ চামচ মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। যদি কেউ টবে গাছ লাগায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে টবে বালি দিয়ে নিতে হবে, এর ফলে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশিত হয়ে যাবে। চারাটি রোপণের ১৫ দিন পর জল সেচ দেওয়ার সাথে সাথে ৫ থেকে ৬ দানা করে DAP সার দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে দানা সারের চেয়ে জৈব তরল সারে গাছ দ্রুত গ্রহন করে। এর সাথে সর্ষের খোলের পচা জল স্প্রে করতে হবে। খোল পচানোর জন্য, ১০০ গ্রাম খোল ১ লিটার জলের সাথে ভেজালেই খোল পচে যাবে। পচা জল ১০ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে নিচের তলানি গুলো ফেলে দিয়ে প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করলেই গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেদিন গাছে খোলের জল স্প্রে করবেন তার আগের দিন গাছে জল দেওয়া যাবেনা। যদি গাছে বেশি ফুল চান তবে গাছকে অবশ্যই কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা রোদ লাগাতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যত বেশি জায়গা নিয়ে বা 'রিপটিং' করে এই গাছ লাগানো যায়, তত বেশী গাছে ফুল আসবে। আর মনে রাখতে হবে এই গাছে যত বেশি ডাল হবে তত বেশি ফুলও আসবে। এই গাছের ডাল বা শাখা 'কাটিং' করেও কিন্তু নতুন চারা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে শাখা গুলো কেটে জলে ভিজিয়ে তারপর বালি দিয়ে হরমোন রুটিং করে চারা বসিয়ে দেওয়া যাবে। যারা একটি গাছে একটি ফুল চান তারা গাছের আশ-পাশের শাখা গুলো কেটে দেবেন,। তাতে একটি ডালে একটিই বড় ফুল আসবে। এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নিমের তেল স্প্রে করতে হবে প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর। গাছে যদি ফাংগাসের আক্রমন হয় তাহলে ''SAFF'' বা ''FUNGICIDE'' স্প্রে করতে হবে। ডালিয়া ফুলের গাছ তিন ভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে, ১. ফুলের বীজ থেকে, ২. গাছের মূলের কন্দ/বাল্ব থেকে, ৩. শাখা কলম বা জোর কলমের মাধ্যমেও নতুন চারা তৈরি করা যায়। তাই চারা রক্ষণাবেক্ষনের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে যখন গাছের ফুল কমে আসে তখন, গাছ ও পাতা শুকিয়ে আসলে গাছ কেটে মাটির ভেতরে থাকা কন্দ গুলো উঠিয়ে নিতে হবে। এরপর ৩-৪ দিন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর শুকনো কন্দগুলো ভালোভাবে মুছে এতে ''SAAF'' বা ''FUNGICIDE'' পাউডার অথবা হলুদের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও ছাই দিয়েও পরিষ্কার করে রাখা যায়। তারপর স্বল্প তাপমাত্রায় কাগজে মুড়ে রাখতে হবে। পরবর্তী বছরে যে কুশিগুলো গজাবে সেগুলোসহ পরবর্তী বছরের চারা রোপণ করতে হবে। এভাবেই ডালিয়ায় বীজ সংরক্ষন করতে হবে।