কুলটি:- কলকাতার চারুমার্কেট এলাকার একটি অভিজাত আবাসনে গত শনিবার (২৯ মার্চ) এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে আসানসোলের কুলটি থানার অন্তর্গত বরাকরের লখিয়াবাদ এলাকায়। মৃত যুবকের নাম অবিনাশ বাউরি। তার পরিবারের দাবি, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার পরিজনরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে চারুমার্কেটের ওই আবাসন থেকে অবিনাশের দেহ উদ্ধার করা হয়। অবিনাশ ওই আবাসনে পরিচারক হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি আসানসোলের বরাকরে। জানা গেছে, গত হোলির সময় তিনি শেষবার বাড়ি গিয়েছিলেন। এই শনিবারই আবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরিবর্তে এলো তার মৃত্যুর খবর। পরিবারের কাছে এই ঘটনা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। অবিনাশের বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের ছেলে সুস্থ-সবল ছিল। তারা বলেন, “আমাদের ছেলে হঠাৎ করে মারা যেতে পারেনা। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমরা বিশ্বাস করি, তাকে খুন করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই।”
অবিনাশের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ওর সঙ্গে শেষবার হোলির সময় কথা হয়েছিল। ও বলেছিল, শনিবার বাড়ি আসবে। কিন্তু এখন ওর মৃতদেহ নিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। এটা কীভাবে মেনে নেব?” স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবিনাশ ছিলেন পরিশ্রমী ও সরল স্বভাবের একজন যুবক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় কাজ করছিলেন এবং পরিবারের ভরণপোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে বরাকর লখিয়াবাদ এলাকায় শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, “অবিনাশ খুব ভালো ছেলে ছিল। এমন ঘটনা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।” পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট না হলেও, ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে দেহ উদ্ধার করেছি। ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি।”এদিকে, অবিনাশের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হয়তো কোনো দুর্ঘটনা, আবার কেউ বলছেন, এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। পরিবারের অভিযোগের পর এই ঘটনা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। এই ঘটনায় আসানসোল থেকে কলকাতা—দুই শহরেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অবিনাশের পরিবার এখন শুধু ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। তারা বলছেন, “আমাদের ছেলে আর ফিরবে না, কিন্তু অন্তত সত্যটা জানতে চাই। যারা এর পিছনে দায়ী, তাদের শাস্তি হোক।” এই রহস্যমৃত্যুর তদন্তে পুলিশ কী উপসংহারে পৌঁছয়, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা এলাকা।