নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশে হিন্দুত্বের ছোঁয়া রয়েছে এই অভিযোগ তুলে বিতর্কের মুখে ঐতিহ্যবাহী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। মৌলবাদীদের চাপ এবং আপত্তির মুখে এবার নববর্ষের এই বর্ণাঢ্য উৎসবের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তরফে এবার থেকে এই শোভাযাত্রা পরিচিত হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে।
মৌলবাদীদের চাপ ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক পালাবদলের পর, হাসিনা সরকারের পতন এবং মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মৌলবাদী শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেই চাপের প্রতিফলন হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত, এমনটাই মত বিভিন্ন মহলের।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা আমির মুফতি সৈয়দ মহম্মদ ফয়জুল করিম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, নববর্ষ উদযাপনের বিরোধিতা না করলেও শোভাযাত্রায় এমন কোনও উপাদান থাকতে পারে না যা ইসলামের দৃষ্টিতে ‘গুনাহ’ হিসেবে বিবেচিত। মূর্তি বা ধর্মবিরোধী প্রতীক থাকলে, তা বাতিল করতে হবে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি: ঐতিহ্যে ফিরেই নাম পরিবর্তন
তবে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ জানিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ নতুন নাম নয়। বরং ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রা ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে শুরু হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পায়, যাতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ করা হয়। বর্তমানে সেই প্রাথমিক নামেই ফিরে যাওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
/anm-bengali/media/post_attachments/wp-content/uploads/2025/04/12155611/mongol-shovayatra_f-810039.jpg)
ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ ঘিরে প্রশ্ন
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ইউনেস্কো-র বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর স্বীকৃতি পায়। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে রমনার ছায়ানট প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে চারুকলা অনুষদের সামনে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শোভাযাত্রার সূচনা হয় এবং শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত চলে এই বর্ণময় আয়োজন।
তবে এবার নাম বদলের ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—শুধু নাম নয়, আদর্শ ও সংস্কৃতির পরিচিতি কী ভবিষ্যতে আরও মুছে যেতে চলেছে?