নিজস্ব সংবাদদাতা: স্ত্রী নিখোঁজ। খোঁজ না মেলায় প্রিয় মানুষকে মৃত ধরে নিয়েছিলেন স্বামী। করেছিলেন শ্রাদ্ধ। কিন্তু ছয় বছর পর হঠাৎ প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেল সেই ‘মৃত’ গৃহবধূকে! তাও আবার স্বামীর বন্ধুদের চোখে পড়ে বিষয়টি। যা দেখে চমকে উঠেছেন সকলেই, বিশেষত স্বামী সুরেশ।
ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের কোডাগু জেলার বাসভানাহল্লি গ্রামে। বছর ছয়েক আগের এই রহস্যের সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান গৃহবধূ মালিজা। বহু খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনও হদিস পাননি স্বামী সুরেশ।
স্ত্রীর হদিস না মেলায় ২০২১ সালে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সুরেশ। পরের বছর, বাড়ি থেকে বেশ দূরে এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। সুরেশ তাঁর শাশুড়িকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দাবি করেন, এটি মালিজারই দেহাবশেষ। সেই মতো শ্রাদ্ধকর্ম সম্পন্ন করেন তিনি।
কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরে যায় এরপরই। স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে সুরেশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সেই কঙ্কাল। শুরু হয় আইনি লড়াই, সুরেশকে জেলে যেতে হয়।
/anm-bengali/media/media_files/2024/11/20/Y8NORPSAAZeD2UotbjVm.jpg)
কিন্তু তদন্তে চমকপ্রদ মোড় আসে, যখন দেখা যায় উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের ডিএনএ নমুনা পরিবারের কারও সঙ্গেই মেলেনি। প্রমাণের অভাবে জেল থেকে মুক্তি পান সুরেশ। ধীরে ধীরে নিজের জীবন নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
চলতি মাসে সুরেশের কয়েকজন বন্ধু কোডাগু এলাকায় ঘুরতে গিয়ে এক মহিলাকে তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে দেখতে পান। দেখে চমকে ওঠেন তারা— ওই মহিলা হুবহু মালিজার মতো দেখতে। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা চুপিচুপি ছবি তুলে রাখেন।
ছবি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরেশ। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। এখন তদন্তে উঠে আসছে এক ভয়াবহ প্রতারণা কাহিনি, যেখানে স্ত্রী বেঁচে থেকেও স্বামীকে অন্যায়ভাবে খুনের মামলায় জড়িয়ে জেল খাটিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই গৃহবধূ এখন এক যুবকের সঙ্গে থাকছেন এবং তাঁর সঙ্গে বহু জায়গায় ঘুরেছেনও। এই ঘটনায় ফের তদন্ত শুরু করেছে কর্ণাটক পুলিশ।
ঘটনাটি সামনে আসতেই পুলিশের তৎপরতা ও প্রাথমিক তদন্তের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। কীভাবে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই কঙ্কালকে মালিজার বলে ধরে নেওয়া হল? কেন সুরেশকে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হল?
বর্তমানে পুলিশ পুনরায় পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সুরেশের জীবনের ছয় বছরের ভয়াবহ অধ্যায় যেন এক চরম মানবিক দুর্যোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তদন্তের পর কি মালিজার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মামলা হবে? সেটাই এখন দেখার।