চাকরি হারিয়ে হতাশ মৌপাল স্কুলের জনপ্রিয় শিক্ষক জাহাঙ্গীর

স্বামীর চাকরিই ছিল পরিবারের একমাত্র আশার আলো। 

author-image
Atreyee Chowdhury Sanyal
New Update
WhatsApp Image 2025-04-04 at 17.40.32

File Picture

নিজস্ব সংবাদদাতা: বাড়িতে মাত্র ২ মাসের শিশুকন্যা। বৃদ্ধ বাবা, ভাই, বোন মিলিয়ে বেশ বড় পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর সেই পরিবারেই নেমে এলো হতাশার নিকষ অন্ধকার! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে বাঁকুড়ার জয়পুরের যুবক জাহাঙ্গীর সেখের। মন খারাপ তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী সকলের! 

প্রথম থেকেই মেধাবী জাহাঙ্গীর ২০১৬ সালে নিজের প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। ২০১৯ সালে কাউন্সেলিং (স্কুল বাছাই)-র মাধ্যমে তিনি জীবন বিজ্ঞানের নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান পশ্চিম মেদিনীপুরের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠে। এরপর, মেদিনীপুর শহরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন জাহাঙ্গীর। সেখান থেকেই প্রতি মাসে নিয়ম করে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় তাঁকে। এর মধ্যেই ২০২১ সালে বিয়ে করেন জাহাঙ্গীর। স্ত্রী সামিনা পারভিনও জীবন বিজ্ঞানের (বা, জীববিদ্যার)  'জুলজি' (প্রাণীবিদ্যা) বিষয়ে এমএসসি, বি.এড। তবে, ধারাবাহিকভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরি পাননি। হতাশার মধ্যেই স্বামীর চাকরিই ছিল পরিবারের একমাত্র আশার আলো। 

মাত্র দু'মাস আগে কোল আলো করে জন্ম নেয় শিশুকন্যা। জাহাঙ্গীর কিংবা সামিনা, কখনো ভাবেননি যোগ্য শিক্ষকদেরও চাকরি চলে যাবে! আর সেই ভরসাতেই তো ২০১৫ সালের উচ্চ প্রাথমিক (আপার প্রাইমারি) পরীক্ষায় পাস করার পর, ২০২১ সালে ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েও ইন্টারভিউ দিতে যাননি জাহাঙ্গীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে হতাশ কন্ঠে বিদ্যালয়ের স্টাফ রুমে বসে জাহাঙ্গীর বলেন, "ভেবেছিলাম আমি যদি ইন্টারভিউতে না যাই, তবে আমার পরিবর্তে একজন বেকার ভাই বা বোন সেই সুযোগটা পাবেন! অথচ একজন বেকারকে সুযোগ করে দিতে গিয়ে, আমি নিজেই আজ থেকে বেকার হয়ে গেলাম!”

বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে স্কুলের প্রথম সামেটিভ মূল্যায়ন। কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব আর কিভাবেই বা এত ছাত্র-ছাত্রীর খাতা দেখা সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন খোদ প্রধান শিক্ষক। 

আপাতত, স্কুল আর আজ থেকে নেই। পরিবার কীভাবে টানবেন জানেন না জাহাঙ্গীর। শিশুর মুখেই বা কী তুলে দেবেন তাও জানেন না। আর এই সব নিয়েই একরাশ হতাশায় ঘেরা আজ জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের জীবন।