নিজস্ব সংবাদদাতা, পাণ্ডবেশ্বর: আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন, তারপরেই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর এই দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে দুর্গাপুজোর উত্তেজনা থাকে তুঙ্গে। দুর্গাপুজো এলেই মৃৎ শিল্পীদের কর্ম ব্যস্ততাও থাকে তুঙ্গে। কারণ তাদের হাতের ছোঁয়ায় দুর্গা প্রতিমা হয়ে ওঠে অনন্যা।
শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল, সাবেকি বনেদি বাড়ি থেকে শুরু করে বারোয়ারি পুজো, সব জায়গাতেই এই মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় দুর্গা প্রতিমা এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। বিভিন্ন পুজো পার্বণে প্রতিমা গড়েই চলে মৃৎশিল্পীদের রুজিরুটি। তার মধ্যে দুর্গাপুজো অন্যতম।
পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের আনন্দ মাঝি এক আদিবাসী যুবক। ছোট থেকেই মাটি নিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন তিনি। যেখানে আদিবাসী সমাজে বনজঙ্গলে খেটে খাওয়া মানুষেরা দিনরাত এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, তেমনই তিনি পরিবারের জন্য সংগ্রাম করতেন। ঠিক সেই সময় আদিবাসী এই যুবকের মাথায় মাটির মূর্তি তৈরি করার জেদ চাপে।
আনন্দ জানান, '' ছোটবেলায় যখন মৃৎশিল্পীরা মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরি করত, তখন তিনি বসে বসে দেখতেন। তখন থেকেই মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরি করার চিন্তা জাগে তার মাথায়। পরিবারের তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মৃৎশিল্পীর কাজ করেন। পড়াশুনা খুব একটা হয়ে ওঠেনি তার। আজ মৃৎশিল্পীর পেশাটাকে তিনি তার জীবিকা অর্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পরিবারে তার ছোট্ট ছেলে এবং স্ত্রী সকলেই তার এই কাজে হাত লাগান।
আনন্দর স্ত্রী ও রাধা মাঝি জানান, '' তিনি সেভাবে শিল্পীর কাজ কখনো শেখেননি। তবে বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে সব কিছু শেখা তার। স্বামীকে তার কাজের সাহায্য করার ইচ্ছা নিয়েই প্রথম প্রথম স্বামীর কাজে হাত লাগাতেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে মূর্তির রং করা থেকে শুরু করে মাটির ডাকের কাজ তৈরি করেন তিনি। ''
পাশাপাশি তাদের ছোট্ট ছেলেও মা বাবার সঙ্গে হাত লাগায়। কিছু না পেলেও ছোট ছোট মাটির ঢেলা তৈরি করে বাড়িয়ে দেয় মা-বাবার দিকে। আনন্দ জানান, '' এবারে দুর্গাপুজোয় অর্ডারটা ঠিকই আছে। তবে মাঝেমাঝে বাদ সাধছে নিম্নচাপ। যদি ভগবানের কৃপা থাকে, বৃষ্টি যদি ভিলেন হয়ে না নেমে আসে তাহলে এবারে দুর্গাপুজোয় লাভের আশা দেখবেন তারা। ''