উন্নয়নের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি ভোট লুট?

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
উন্নয়নের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি ভোট লুট?

হরি ঘোষ, জামুড়িয়াঃ উন্নয়নের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি ভোট লুট? প্রশ্ন জামুড়িয়া পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা জামুড়িয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইএম প্রার্থী তাপস কবির। জামুড়িয়া এক নম্বর ওয়ার্ডে এই পুর নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থীর কাছে তিনি পাঁচ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
 তাপস কবি জানান, 'বর্তমান পৌরনিগম জামুড়িয়ার উপর নজর নেই। কয়েকটি পরিকল্পনাহীন ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক ছাড়া জামুড়িয়ার উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। যেটা এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি।' নিজেদের আমলের কাজের পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে তিনি জানান ১৯৯৩ সালে জামুড়িয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি এলাকাকে নোটিফায়েড করা হয়। ১৯৯৫ সালে জামুড়িয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি এলাকাকে পুরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জামুড়িয়া পুরসভা ২৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়।


২০১৫ সালে জামুড়িয়া, আসানসোল ,রানীগঞ্জ, কুলটি পৌরসভাকে নিয়ে গঠিত হয় আসানসোল পৌর নিগম। জামুড়িয়া পৌরসভা পরিবর্তন হয় আসানসোল পৌরনিগমের অধীন বোরো-১। তাপস বাবু জানান তাদের আমলে জামুড়িয়াবাসীকে পরিস্রুত পানীয় জল প্রদান করার জন্য প্রথম দফায় গোবরডাঙ্গা এলাকায় অজয় নদীর উপর পাম্পিং স্টেশন তৈরি করে নটি ওয়ার্ডকে জল সরবরাহ করা হয়। বেশকিছু ওয়ার্ডে বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার আগেই পৌরবোর্ড পরিবর্তন হয়ে তৃণমূলের হাতে চলে যায়। যার ফলে তারা কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন না। বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পৌর বোর্ড পরিকল্পনাহীন ভাবে কয়েকটি ওভারহেড জলের ট্যাংক তৈরি করেছে মাত্র। কিন্তু সেই ট্যাংকে জল কোথা থেকে আসবে এবং কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাবে তার কোনো পরিকল্পনা তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড করেনি। যার ফলে ওভারহেড ট্যাংক গুলি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। জামুড়িয়ায় যাতে যাত্রা নাটক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে হয় সেই সমস্ত কথা চিন্তা করে জামুড়িয়ায় তৈরি করা হয় টাউন হল, আপ্পায়ন হল। কিন্তু বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি ভগ্নপ্রায়।


তাপস কবি জানান, জামুড়িয়া শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য জামুড়িয়া বাইপাস রাস্তার ধারে  ফাঁকা এলাকায় ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই গুদামঘর গুলি এখনো বিলি হয়নি। যার ফলে বাজারে মৌ রাস্তার ওপরে পণ্যবাহী গাড়ি গুলো জিনিসপত্র লোডিং আনলোডিং করে থাকে। জামুড়িয়ার যানজটের এটাই প্রধান কারণ বলে জানান তাপস কবি। বর্তমান তৃণমূল সরকারের কাছে জামুড়িয়া উন্নয়নের স্বার্থে তারা বারংবার জানিয়েছিলেন জামুড়িয়াকে পৌরসভা হিসাবে রাখতে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে পুরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করে পৌরনিগম করেছে তৃণমূল। যার ফলে জামুড়িয়ার মতো গ্রামীণ এলাকাগুলি বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়ন থেকে।
 তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভা বোর্ড জামুড়িয়ার জন্য নতুন কিছুই করেনি। অথচ বাম পরিচালিত বোর্ডের পরিকল্পনা ছিল জামুড়িয়ায় খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম তৈরি করা, কলেজ ক্যাম্পাস করা ইত্যাদি। তাপস কবি জানান, ভোট প্রচারে সাধারণ ভোটাররা তাদের আমলে উন্নয়নের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। এবার জামুড়িয়ায় মানুষ বামেদেরকে ভোটে জেতানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফলে বহিরাগতদের দাপট, বুথ জাম, ছাপ্পা ভোট মানুষের সঠিক মতামত প্রকাশিত হলো না বলে জানান তাপস কবি।



অপরদিকে আসানসোল পৌরনিগমের বিগত বোর্ডের জল দপ্তরের মেয়র পরিষদ তথা রানীগঞ্জ বোরোর প্রশাসক পূর্ণশশী রায় জানান, জামুড়িয়ার উন্নয়নের ব্যাপারে মানুষ তাদের রায় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রচুর উন্নয়ন করার পরও এখনো মানুষের সমস্যা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হয়নি।
 বাম জমানায় জামুড়িয়ার কোনো উন্নয়ন হয়নি। যার ফলে মানুষের প্রচুর সমস্যা ছিল। মানুষের সেই সমস্যাগুলো মিটিয়ে নতুন সরকারি সুবিধা দিতে একটু সময় লাগছে। তবে নতুন করে যে বোর্ড তৈরি হওয়ার পরে জামুড়িয়ার চিত্রটাই পাল্টে যাবে। পূর্ণশশী রায় জানান তাদের বোর্ডে রানিসায়ের মোড় থেকে জামুরিয়া ,চাঁন্দা মোড় থেকে জামুড়িয়া ,জামুড়িয়া থেকে দোমাহানি পর্যন্ত রাস্তার সম্প্রসারণ ও নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের দিকে নজর রাখা হয়েছে। জামুড়িয়ার সমস্ত রাস্তায় স্ট্রীট লাইট লাগানো হয়েছে। প্রতিটা গ্রামের রাস্তা পাকা করা হয়েছে। প্রায় জায়গায় ড্রেনিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামুড়িয়ায় খেলার মান উন্নত করার লক্ষ্যে ১০টিরও বেশি খেলার মাঠ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়েছে। প্রায় সমস্ত পুকুর ঘাট পাকা করা হয়েছে।


 জামুড়িয়ায় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচা করে চারটি ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করে সাধারণ মানুষের জল সমস্যা মেটানো হয়েছে। বাম জমানায় শিল্প তৈরি হলেও শিল্পে স্থানীয় বেকাররা কাজ পেতেন না। তারা পৌরনিগমের ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় বেকারদের স্থানীয় কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করেছেন। জামুড়িয়ায় তিনটি নতুন স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে প্রচুর মানুষ এই করোনা মহামারী সময় উপকৃত হয়েছেন। জামুরিয়ায় যানজট একটা বড় সমস্যা ছিলো। বাজারকে যানজট মুক্ত করতে বাইপাস রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।