বাংলাদেশে মহামারী করোনাভাইরাস শনাক্ত লাগামছাড়া

author-image
New Update
বাংলাদেশে মহামারী করোনাভাইরাস শনাক্ত লাগামছাড়া

হাবিবুর রহমান, ঢাকা : বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মহামারী
করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে
বিপর্যস্ত দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে প্রতিদিনই বেড়েই
চলেছে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। যেন হঠাৎ করেই লাগামছাড়া
হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস মহামারি। প্রতিদিনই ভাঙছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের
রেকর্ড। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণহানিও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে মোট মৃতের
সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৭ জনে। বুধবারও করোনায় মারা গেছেন আরো ৮৫
জন। এছাড়া একদিনে দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরো ৫ হাজার ৭২৭ জন।
এতে বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন। এক
দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৩ এপ্রিল এক দিনে ৬ হাজার ২৮ জন নতুন
রোগী শনাক্ত হয়েছিলো।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা.
নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায়
মৃত ৮৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন ও নারী ৩০ জন। এদের মধ্যে সরকারি
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ জন, বাসায় ১০
জন ও হাসপাতালে আনার পথে একজন মারা যান। একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী
শনাক্ত হয়েছেন আরো ৫ হাজার ৭২৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮
লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা
পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫ হাজার ৭২৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভি আসে। নমুনা
পরীক্ষার হিসাবে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ নিয়ে মোট নমুনা
পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪ লাখ পাঁচ হাজার ৭৫টি। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম
রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এর আগে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় সারা বাংলাদেশে ৭৬ জনের মৃত্যু এবং ৪ হাজার
৮৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত মঙ্গলবার নমুনা
পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী
শনাক্তের সংখ্যা আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে
সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ার পর গত ১৩ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ২৮ জনের
দেহে করোনা শনাক্ত হয়। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জনের বেশি
মৃত্যুর খবর জানানো হয় গত ২৯ এপ্রিল। ওইদিন সারা বাংলাদেশে ৮৮ জনের
মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ১৬৮
জন। এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে
ওঠা রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৯১
দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৮৫ জনের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব ১০ জন,
চল্লিশোর্ধ্ব ১১ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৮ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৪৬ জন রয়েছেন।
বিভাগওয়ারী দেখা গেছে, মৃত ৮৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রামে
সাতজন, রাজশাহীতে ১৮ জন, খুলনায় ৩৬ জন, বরিশালে একজন, রংপুর বিভাগে একজন
ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণহীনভাবে
বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এরপরও গ্রামের লোকজন সচেতন না হওয়ায় রোগীর
সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং
উপসর্গ নিয়ে মোট ৭৪ জন মারা গেছেন। আর সারা বাংলাদেশ মিলিয়ে এ সংখ্যা ৭৮
জন। চুয়াডাঙ্গায় একদিনে ৬৯ জনের মধ্যে ৬৪ জনই পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
শনাক্তের হার ৯৩ শতাংশ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার। শহর
কী গ্রাম, সব যায়গায় শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে বাড়ছে রোগীর
সংখ্যা। অনেকে আবার মৌসুমি জ্বর বলে বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন কিংবা
সামাজিকতার ভয়ে চেপে যাচ্ছেন। এতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪
ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরো ৮ হাজার ২২৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ
৬৮ হাজার ২১৪ জন। এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৩৮
লাখ ৯৭ হাজার ৩৯১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ৮৭৫
জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর
দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা
সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৭
হাজার ৮৭৫ জনের। আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে
এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন তিন কোটি ২৭ হাজার ৮৫০ জন এবং এখন
পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৯০ হাজার ৬৯১ জনের। আক্রান্তে তৃতীয়
এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি
৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৯৭
জনের। আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন
পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ২ জন। ভাইরাসটিতে মারা
গেছেন এক লাখ ১০ হাজার ৮২৯ জন। এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৬ জন। এর
মধ্যে মারা গেছেন ৪৯ হাজার ২৯৩ জন। তবে আক্রান্তের তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ,
যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, ইতালি নবম ও কলম্বিয়া দশম স্থানে
রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম।





আরও খবরঃ https://anmnews.in/Home/GetNewsDetails?p=4547https://anmnews.in/Home/GetNewsDetails?p=4568
For more details visit www.anmnews.in
Follow us at https://www.facebook.com/newsanm