৬০৯ বছরের পুরনো রাজবাড়ির পুজোয় আজও ব্রাত্য নারীরা

author-image
Harmeet
New Update
৬০৯ বছরের পুরনো রাজবাড়ির পুজোয় আজও ব্রাত্য নারীরা

দিগ্বিজয় মাহালী, দাসপুর : নারী শক্তির আরাধনায় নারীরাই ব্রাত্য। ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলে আসছে দাসপুরে নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গা পুজো। এবছর রাজবাড়ির পুজো ৬০৯ বছরে পদার্পন করবে। ​অথচ মায়ের পুজোতে মায়েরাই ব্রাত্য । এমনটাই চলে আসছে ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এটাই এই রাজবাড়ির প্রথা। আর সেই প্রথা আজও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন রাজ পরিবারের মহিলারা।


রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয়নারায়ন ঘোষ। তিনি রাজার অনুমতি নিয়ে মেদিনীপুর জেলায় শিকার করতে এসেছিলেন। দাসপুরের নাড়াজোল জঙ্গলে শিকার করে ফেরার পথে হঠাৎই দেখেন একটি বক তাড়া করছে বাজপাখিকে। এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন নায়েব মশাই। বাড়ি ফিরে সেই রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখেন, ওই জঙ্গলেই রয়েছেন মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি। মায়ের নির্দেশে সেই মূর্তি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করেন বাড়ি। এই বাড়িতেই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজা শুরু করেন বাংলার ৮২০ বঙ্গাব্দে। পরবর্তীকালে উদয় নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজ বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্গাপুজোর যাবতীয় বিধি নিষেধ তিনি চালু করেন। আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি ধ্বংসের পথে। কিন্তু প্রথা মেনে আজও রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিতা হয়।রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিতা হন মা দুর্গা, তাই নেই বলি প্রথা । আজও রাজবাড়ির মহিলারা পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন না। নিতে পারেন না প্রসাদ ও বেলপাতা। রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিতা হন। 

এখানে মায়ের সাথে থাকে না কার্তিক,গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এখানে যেহেতু অষ্টধাতুর দুর্গা, তাই বিসর্জন হয় না, হয় শুধুমাত্র ঘট ডুবিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হয়। দুবছর করোনার জেরে সেভাবে পুজোর আয়োজন হয়নি তবে এবছর রীতিনীতি মেনে সাড়ম্বরে পালিত হবে দুর্গা পুজো তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান রাজবাড়ির সদস্যরা। এবছর দুর্গা পুজোয় পর্যটকদের জন্য রাজবাড়িতে থেকে পুজো দেখার সুযোগ থাকছে। তার জন্য রাজবাড়ির ভিতর চালু করা হবে ৫ টি রুম বিশিষ্ট হোম-স্টের ব্যবস্থা। পর্যটকরা পুজো কদিন রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করে রাজকীয় খাবার দাবার সহ পুজো দেখা ও রাজবাড়ির ইতিহাস ঘুরে দেখতে পারবেন এমনটাই জানান রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা। দাসপুর ছাড়াও দূরদূরান্তের বহু মানুষ পুজোয় ভিড় জমান নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গা পুজোয়। মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে নাড়াজোল রাজবাড়িতে। সেই ইতিহাসই আজ ধ্বংসের পথে।বর্তমানে হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর শুরু হয় সংস্কারের কাজ। মাঝপথেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে রাজবাড়ি সংস্কারের কাজ।নাড়াজোল রাজবাড়ি সংস্কার করে প্রাচীন ইতিহাস কে রক্ষা করার আবেদন রাজবাড়ির সদস্যদের।