নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতুর একাংশ ভেঙে ঝুলছে। যার জেরে যাতায়াতে চরম সমস্যায় রয়েছে একাধিক গ্রামের মানুষ। ভেঙে ঝুলে পড়া সেতুর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাতায়াত। আবার কৃষিকাজের জন্য নদীর উপর কৃষকদের তৈরি অস্থায়ী রাস্তা দিয়েও যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। দ্রুত সেতু মেরামতের দাবি এলাকাবাসীদের। এলাকায় ভাঙা সেতুকে নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে জোর তরজা। জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা গ্রামে।
শিলাবতী নদীর উপর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতুটির বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি এই সেতুর একাংশ ভেঙে ঝুলছে। ভাঙা সেতুর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সাইকেল মোটরসাইকেল। যেকোনো মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা। এই সেতুর উপর দিয়েই যাতায়াত ভগবন্তপুর ১ ও ভগবন্তপুর ২ নম্বর দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮-১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের। শিলাবতী নদীর একপ্রান্তে রয়েছে ঘোষকিরা, কোল্লা, খুড়শি, ধরমপোতা অপরপ্রান্তে রয়েছে কেশেডাল, ভগবন্তপুর, খিরাটি, ভৈরবপুরসহ একাধিক গ্রাম। এলাকাবাসীদের দাবি, ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দাসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের এই কাঠের সেতু পেরিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত কার্য্যালয়, স্কুল, কলেজ থেকে হাসপাতাল, বাজারহাট যেতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। গত বন্যায় দু-দুবার নদীর জল বেড়ে ঢুবে গিয়েছিল সেতুটি। এমনকি পানার চাপে জলের তোড়ে সেতু ভেঙে পড়া আটকাতে হাত লাগিয়েছিল ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু সেতু মেরামতে গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে দাবি এলাকাবাসীর।
সম্প্রতি সেতুর মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী। মাসখানেক আগে ঘোষকিরা গ্রামের কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে কৃষক কাজ ও কৃষি সামগ্রী নদী পারাপারের জন্য সেতুর লাগোয়া নদী বরাবর বলি ও মাটি দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করেছিল,সেতু ভেঙে পড়ায় সেই অস্থায়ী রাস্তা দিয়ে চলছে যাতায়াত। ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা ও চৈতন্যপুর এই দুই এলাকায় শিলাবতী নদীর উপর স্থায়ী কংক্রিট ব্রীজের দাবি দীর্ঘ দিনের। সেই ৮০ র দশক থেকে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা ও রাজ্য স্তরে লিখিত আবেদন জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানায় এখনও স্থায়ী সেতু নির্মাণ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের দাবি এলাকাবাসীর। বেহাল ও ভেঙে পড়া কাঠের সেতুটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন চাইছেন এলাকার বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষের ভোগান্তি ও সমস্যাকে হাতিয়ার করে শাসকদল ও প্রশাসনকে তীব্র কটাক্ষ বিজেপির।
বিজেপির চন্দ্রকোনা-১ মন্ডল সভাপতি সুকান্ত দোলই বলেন," এই সেতু নিয়ে গ্রামবাসীরা একাধিক বার বিক্ষোভ দেখিয়েছে,পোস্টারিংও করেছে। গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারাও সরব হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার ও দল যেখানে কাটমানি পাবে সেখানে বেশি গুরুত্ব দেয়,এখন আবাস যোজনা নিয়ে মেতে রয়েছে কারণ ওখানে কাটমানি পাবে তাই কাঠের সেতু মেরামত নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। " বিজেপিকে পাল্টা আক্রমন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের,তৃণমুলের ভগবন্তপুর ১ নম্বর অঞ্চল সভাপতি আরমান আলী খাঁন বলেন," সারাদেশ জুড়ে বিজেপি যেভাবে কাটমানির সরকার চালিয়েছে বিগত নির্বাচনে দেশের মানুষ উত্তর দিয়ে দিয়েছে। ৩৪ বছর বাম আমলে অঞ্চলে একটিও কাঠের ছেড়ে বাঁশের সাঁকো ছিলনা। আমাদের সরকারের আমলে অঞ্চলে গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যে কাঠের সেতু ভেঙে গিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত দ্রুত সেটি মেরামত করে দেবে। "
এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানিয়েছেন," গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেতুটি মেরামত করবে। ইতিমধ্যে আমরা জেলায় একটি প্রপোজাল, চিঠি পাঠিয়েছি। ওই এলাকায় শিলাবতী ও কেঠিয়া খালের উপর দুটি আরসিসি ব্রীজ তৈরির প্রপোজাল জেলা থেকে আমাদের চিঠি করা হয়েছে। আবাসের কাজটা মিটলেই আমরা স্থায়ী ব্রীজ তৈরির সার্ভের কাজ শুরু করে দেবো। "