নিজস্ব প্রতিনিধি, চন্দ্রকোনাঃ এক গৃহবধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীদের নিদান অনুযায়ী দিতে হবে দু লক্ষ টাকা জরিমানা। এমন নিদানের পর থেকেই গৃহবধূ সপরিবারে বাড়িছাড়া হয়েছেন। সুবিচার চেয়ে পুলিশ থেকে শুরু করে আদিবাসী সংগঠন, সকলকে লিখিত আকারে আবেদন জানাল ওই পরিবার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা (Chandrakona) ১ নম্বর ব্লকের জাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তাতারপুর গ্রামের ঘটনা। জানা যায়, তাতারপুর গ্রামের বাসিন্দা হারু মান্ডি ও বুল্টি মান্ডি,ডাইনি অপবাদ নিয়ে বাড়ি ছাড়া দীর্ঘ বেশ কিছুদিন ধরে। সুবিচার চেয়ে প্রশাসন ও আদিবাসী সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগেই গৃহবধূ বুল্টি নাকি বাড়িতে পুজো-অর্চনা শুরু করে। আর তারপর থেকেই ঘটতে থাকে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। যেমন একে একে মৃত্যু হতে থাকে পাড়া-প্রতিবেশীর ছাগলের, এমনকি বেশ কয়েকজন বাচ্চা শিশুর শরীর খারাপ অবধি শুরু হয় বলে দাবী পাড়ার আদিবাসী পরিবারগুলির। এহেন ঘটনাকে ঘিরে গ্রামজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তারপরেই প্রতিবেশীরা সন্দেহ করে বুল্টি ডাইনি। এই নিয়েই শুরু হয় বুল্টির পরিবারের সাথে পাড়া প্রতিবেশীদের বিবাদ। সেই বিবাদ চরমে ওঠে। ডাইনি অপবাদে মহিলাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে দাবী ওঠে। তারপর থেকেই আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া বুল্টি ও তার পরিবারের সদস্যরা। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে আদিবাসী সংগঠন সকলকে লিখিত আকারে আবেদন জানিয়েছে বুল্টি। সঠিক বিচারের আশায় রয়েছেন তিনি।
উল্টে প্রতিবেশীদের দাবি, বুল্টি ও তার অনুগামীরা পাড়া-প্রতিবেশীদেরও মারধর করেছে। যদিও গ্রামের এক আদিবাসী নেতা বিজয় টুডু সমস্ত ঘটনার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘একটা কুসংস্কার রয়ে গেছে, তাই এই ঘটনা। ‘ অপরদিকে আদিবাসী সংগঠন জাকাত মাঝি পরগনা মহলের জেলা নেতা মনোরঞ্জন মুর্মুর দাবী কিছু মানুষের মধ্যে অন্ধ কুসংস্কার রয়ে গেছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না, দ্রুত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।‘ চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ সূত্রে খবর, একটি লিখিত অভিযোগ মিলেছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যাই হোক এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালিয়েও ডাইনি কুসংস্কার এখনো দূর করা যায়নি মানুষের মন থেকে।