দাঁতাল হাতির হামলা ! এবার ঠেকাতে ঘাসের চাষ

বন দফতরের নয়া প্রয়াস।

author-image
Adrita
New Update
k

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ রাত হলেই জমির আল পথ ধরে আগুনের মশাল হাতে নেমে পড়ে  গ্রামবাসীরা। সারাদিন খাটুনির পর জমির ফসল, ঘরবাড়ি বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে হাতিকে লোকালয় থেকে জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে।

Asian elephant family group with young elephants in the middle - Stock  Image - Everypixel

মাওবাদী পর্বের পর জঙ্গলমহলে এখন বড় সমস্যা দলমার দাঁতাল বাহিনী। যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বনদপ্তরের কাছে। মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জমির ফসল নষ্ট লেগেই আছে ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। সেই ঘটনায় রাস টানতে এবার ঘাস চাষের উদ্যোগ নিল বনদপ্তর। এর আগেও ফলের গাছ, বাঁশ, খেজুর, বট সহ নানা পরিকল্পনা করেও আটকানো যায় না হাতির হানা। ওই সমস্ত গাছ লাগানোর পর একটু বড় হলেই হাতির পাশাপাশি গরু-ছাগলও খেয়ে শেষ করে দিয়েছে।

মেদিনীপুর বন বিভাগের ডিএফও দীপক এম রেড্ডি বলেন, " পরীক্ষামূলকভাবে আপাতত ১০ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষ করা হচ্ছে। যে ঘাসগুলি হাতি খেতে পছন্দ করে সেসব ঘাসই চাষ করা হচ্ছে। " এর আগে তিনি উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া, গরুমারা এলাকায় এই ঘাস চাষ করেছিলেন। তাতে সফলতা মিলেছে। এবার সেই উদ্যোগ দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে। 

এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, জঙ্গলে খাবারের অভাবে লোকালয়ে এসে বারবার হানা দিচ্ছে হাতি। চলতি বছরে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হাতির হানায় দক্ষিণবঙ্গে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের চাষের জমিও তছনছ করে দিচ্ছে দাঁতালরা। এই বিপদ থেকে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের বাঁচাতে এবার জঙ্গলের মধ্যেই ঘাস চাষ শুরু করে দিল বন দফতর। একদিকে হাতিদের জঙ্গলে আটকে রাখার চেষ্টা অন্যদিকে দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার। জানা গিয়েছে, বনদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গলের ভেতরে অনেকেই কৃষি জমি করে ফেলেছিলেন। কয়েকবার ধান চাষও করেছিলেন। তবে বাড়িতে ধান আনার আগেই হাতিতে নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে সেই জমি পতিত অবস্থায় পড়েছিল। এবার সেই জমি পুনরুদ্ধার করলো বনদপ্তর। 

Happy the elephant: lessons for the future of animal rights law

ডিএফও দীপক এম বলেন, " দখল হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার করা খুবই কঠিন কাজ। আমরা চেষ্টা করছি দখল হওয়ার আগেই সেই জায়গাগুলোতে গাছ এবং ঘাস চাষ করতে। লালগড়, চাঁদড়া, আড়াবাড়ি রেঞ্জ এলাকায় ১০ হেক্টর ঘাস চাষের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। চাঁদড়া রেঞ্জের গোলগোলচটি, লালগড় রেঞ্জের মথুরাপুর, আড়াবাড়ি রেঞ্জের টু্ংনি এলাকায় জমিতে ঢাড্ডা ও নেপিয়ার এই দুই জাতীয় ঘাসের চাষ হচ্ছে। চাষের ওই জায়গাটি সোলার চালিত বৈদ্যুতিক ফেন্সিং দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যাতে ঘাস বড় হওয়ার আগে গরু, ছাগল বা হাতি ঢুকে নষ্ট না করে দেয়। বাঁকুড়া এবং রূপনারায়ণ থেকে এই দুটি ঘাসের বীজ সংগ্রহ করেছে মেদিনীপুর বনদপ্তর। ''

চাঁদড়া রেঞ্জের আধিকারিক সৈকত বিশ্বাস বলেন, " হাতি নেপিয়ার ও ঢাড্ডা প্রজাতির ঘাস খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই এই বিশেষ প্রজাতির ঘাস চাষ করা হচ্ছে। তিন হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ নেপিয়ার ও বাকি ২০ শতাংশ ঢাড্ডা ঘাসের চাষ করা হচ্ছে।"

লালগড় রেঞ্জের আধিকারিক লক্ষীকান্ত মাহাত বলেন, "৪ হেক্টর জমিতে ওই দুই প্রজাতির ঘাস চাষ করা হচ্ছে। দুই থেকে তিন মাসে এই ঘাস ৫ ফুট উচ্চতার সমান হয়ে যায়। ফলে এটি হাতিদের পেট‌ও ভরায় সহজে। জঙ্গলের পাশে থাকা জমিতে খাবারের খোঁজে হাতি নেমে যায়। বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাতে সেই ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় তারই চেষ্টা করা হচ্ছে। "

Bill would remove Bronx Zoo's 2 remaining elephants

জানা গিয়েছে, এই ঘাস চাষ করলে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শুষ্ক মাটির ক্ষয় রোধ করে। এটি আফ্রিকার তৃণভূমিতে ব্যাপক মাত্রায় ফলে। সেইসঙ্গে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে খড়্গপুর বন বিভাগের নয়াগ্রাম এলাকাতেও পরীক্ষামূলকভাবেও এই ঘাস চাষ শুরু হচ্ছে।

Adddd