নিজস্ব সংবাদদাতা:রাঢ় বাংলার জঙ্গলমহলের হারিয়ে যাওয়া পুরানো সহরায় চিত্রকলাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেন কিছু শিল্পী। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলমহলের আদিবাসী মাহাতো অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম সাজিয়ে তুলছেন সহরায় চিত্রকলা দিয়ে।
বাদনা পরব, সহরায় চিত্রকলা কালী পুজোর দিন থেকে শুরু হয়ে যায় জঙ্গল মহলের একাধিক আদিবাসী গ্রামে । আর সেই উৎসবকে সামনে রেখেই গ্রামের মানুষজন নিজেদের বাড়ি নানা রঙে রাঙিয়ে তোলেন । আগে মাটি এবং খড়িমাটি দিয়েই বাড়ির দেওয়াল সাজিয়ে তোলা হতো। দিন বদলেছে। আর তার সঙ্গে বলাচ্ছে মানুষের চিন্তা ভাবনা। সেই বদলানো সময়কে সঙ্গী করেই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এবার জঙ্গলমহল এলাকার বিভিন্ন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজন বা শিল্পীরা একত্রিত হয়েই এই কাজ করে চলেছেন। মূলত ভেষজ পদ্ধতিতে তৈরি করা রঙ দিয়েই এবার জঙ্গলমহল এলাকার বাড়ির দেওয়াল সাজানোর কাজ চালাচ্ছেন শিল্পীরা।
জঙ্গলমহলের সংস্কৃতি জগতের মানুষ শিল্পী মাধুরী হাতিয়ালের উদ্যোগেই এই কাজ চলছে জঙ্গলমহলের আদিবাসী ও মাহাতো সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে। প্রতিটি ছবিতেই একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে ।
বাদনা পরব মূলত বলা হয় গোরু খুটানকে। সারা বছর যে গোরু বা গবাদি পশুকে নিয়ে চাষের কাজ করা হয় সেই গোরুকে সাময়িক আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হয় এই গোরু খুটান উৎসব। যা চলে কালী পুজোর দিন বিকেল থেকে ভাতৃ দ্বিতীয়ার দিন বিকেল পর্যন্ত। এলাকার বয়স্ক মানুষের সঙ্গে সঙ্গে এই সহরায় চিত্রকলা ফুটিয়ে তোলার জন্য আজকের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় শিল্পী মাধুরী হাতিয়াল এর বক্তব্য, পুরানো সংস্কৃতি আজকের দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই পুরানো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর থেক আদিবাসী গ্রামগুলোতে শুরু হয় বাদনা পরব। এদিন গ্রামের মহিলা, পুরুষ সবাই শোভাযাত্রা সহকারে গ্রামের একাধিক নির্বাচিত গোরুকে খুঁটিতে বেঁধে উৎসবে মাতেন। জারকা গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী বাদনা পরব দেখতে জড়ো হন এলাকার প্রচুর সাধারণ মানুষ। মূলত কালী পুজোর পরে এই উৎসব হয় গোরুকে আনন্দ দিতে এবং নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য। উৎসবের আগের দিন গোরুকে সারা রাত জাগিয়ে রাখা হয়।