নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দ্রকোণাঃ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশেডাল গ্রাম।এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী নদী,নদী পাড়ে রয়েছে ছোটো বড়ো কাঁচাপাকা বাড়ি। নদীর পাড় বরাবর রয়েছে গ্রামের মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মোরাম রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে কেশেডাল, ইশনগর, চৈতন্যপুর, খিরাটি, ভগবন্তপুরসহ একাধিক গ্রামের যোগাযোগ।
কেশেডাল গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষায় এই শিলাবতী নদীর রোষের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। নদীর পাড় একটু একটু ভেঙে বা ধসে বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ২০২১ সালের ভয়াবহ বন্যা ও চলতি বছরে গত বন্যা ও ডানার প্রভাবে শিলাবতীর রুদ্র রুপে আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছিল বাসিন্দাদের। রাত জেগে বাঁধ পাহারা ও ভাঙন আটকাতে জেনারেটর চালু করে রাত জেগে নদী বাঁধ ভাঙন আটকানোর মরিয়া চেষ্টা করতে হয়েছিল তাদের। ২০২১ সালে কাঠের বল্লী ও বালির বস্তা দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে এই বাঁধ মেরামত করা হলেও তা এক বছর যেতে না যেতেই সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে। চলতি বছরের বন্যায় মেরামত করা নদী বাঁধে ফের ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়।
বর্তমানে গ্রামের যাতায়াতের রাস্তার একাংশ নদীগর্ভে চলে গিয়েছে,নদীর পাড় এগিয়ে চলে এসেছে বাড়ির দোরগোড়ায়। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে কেশেডাল গ্রামের বাসিন্দাদের। কয়েকটি দোতলা পাকা বাড়ি তো একেবারে নদীর ধারে চলে এসেছে,এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে এই বাড়ি গুলিও নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে,বাড়ি ছাড়া হতে হবে বাসিন্দাদের এমনটাই জানাচ্ছেন তারা। বন্যার সময় বাড়িতে থাকতে ভয় করে,বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয় বাসিন্দাদের,জল কমলে তবেই বাড়ি ফিরতে পারে তারা।নদী পাড়ে বসবাস যেভাবে নদী ক্রমশ এগিয়ে এসেছে তাতে বাড়ির বাচ্চা ছেলেমেয়েদের চোখের আড়াল হতে দেওয়া যায়না,রাস্তায় যাতায়াতেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ একটু বেসামাল হলেই নদী পাড় থেকে পড়ে গিয়ে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি প্রধান এলাকা চন্দ্রকোনার এই কেশেডাল গ্রাম,সাইকেল,মোটরসাইকেল ছাড়া বড়ো গাড়ি যাতায়াত কার্যত বন্ধ ফলে কৃষি কাজেও সমস্যায় পড়তে হয় তাদের এমনই জানান গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বাঁধ মেরামত হলেও সেই টাকা জলে গেছে। স্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামত না হলে আগামী দিনে এই বাঁধ ভাঙলে আশপাশের ৮-১০ টি গ্রাম জলের তলায় চলে যাবে,বাড়ি ঘর থেকে কৃষি জমি সবই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বন্যা মিটলেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা বাঁধ পরিদর্শনে আসে তারা দেখে আর ছবি তুলে চলে যায়। এবার স্থায়ী ভাবে পাকাপাকি বাঁধ বাঁধার দাবি তুলছে কেশেডাল গ্রাম।
নদী পাড় ভেঙে ক্রমশ এগিয়ে আসছে এবং বাসিন্দাদের দুঃশ্চিন্তার কথা স্বীকার করেছেন চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক। এ বিষয়ে তিনি জানান," শাল বল্লী বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে আগেও সেচ দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের তরফে। ওনারা কাজও করেছিলেন। নদী ভাঙন ঠেকাতে আমরা এবং মহকুমা প্রশাসনের তরফে সেচ দপ্তরের সাথে কথা বলেছি,ওনাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাঁধ মেরামতের।ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত কাজ শুরু করবেন যাতে ভাঙন আটকানো যায়। "
প্রশাসন আশ্বাস দিলেও গ্রামবাসীরা দাবি তুলছেন আর কোটি টাকা খরচ করে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে সেটাকা জলে যাবে আগের মতোই।এবার কংক্রিট স্থায়ী বাঁধ মেরামতের দাবি তুলছে কেশেডাল গ্রাম, এখন দেখার ভাঙন ঠেকাতে প্রশাসনের তৎপরতা।