নিজস্ব সংবাদদাতা, সবংঃ " সবুজ বন্ধু অহর্নিশ / হজম করে বায়ুর বিষ "... গাছ আমাদের জীবনের জীয়নকাঠী। আমাদের বেঁচে থাকার শ্বাসবায়ু থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবুজ বন্ধুদের ভূমিকা অপরিসীম। দ্রুত নগরায়ন থেকে শুরু করে নানান কারণে বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ ক্রমবর্ধমান। হারিয়ে যাওয়া বাংলার সনাতনী গাছের বিস্তারের বার্তাকে সামনে রেখে সবং-এর কোলন্দা গ্রামের কর পরিবার অস্মিতের অন্নপ্রাশন উপলক্ষে " বাংলার অলংকার / আমাদের অহংকার। " এই শিরোনামে বাংলার দ্রুত হারিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ১২ টি বৃক্ষের বীজ অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
'' আমলকী,হরিতকী, বিভূতকী, সুপারি, পদ্ম, হিজল, পিপুল, আঁতমারা, যষ্টিমধু, তেঁতুল, রুদ্রাক্ষ, কুচিলা বীজ সুদৃশ্য থলিতে ভরে দেওয়া হয়। সোনার থলিতে কেন ? এই ঔষধী গাছগুলী সোনার মতোই দামী তাইতো দামী থলির ব্যবহার। '' জানান অস্মিতের মামাদাদু কার্তিক জানা। পরিবারের পক্ষে ঠাকুমা সুজাতা কর বলেন, '' অতিথিদের সবুজ গাছ দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু গাছকে সযত্নে নিয়ে যাওয়া এবং যথাযথভাবে নিয়ে গিয়ে রোপন করাটা বেশ কষ্টকর। সবার সব গাছ লাগানোর জয়গাও থাকে না। যে কারণে আমরা বীজ অতিথির হাতে তুলে দিলাম। যাতে তিনি তার নিজস্ব জায়গায়, ক্লাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা অন্যান্য বন্ধু প্রতিবেশীদের মধ্যে এই বিজ গুলি বিতরণও ক্যতে পরবেন। সেই বীজগুলো থেকে বৃক্ষরূপে একটি গাছও মাথা তুলে দাঁড়ালে আমাদের শ্রম সার্থক হবে। আমার দাদু ভাইয়ের এই শুভ অনুষ্ঠান তখনই সার্থক হবে বলে মনে করি।'' অস্মিতের মা কাকলি, বাবা সৌরভ, দিদি অস্মিতা ও পরিবারের অন্যান্য অতিথিবৃন্দ এই বিশেষ ব্যবস্থায় বেশ খুশি।
উল্লেখ্য অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণের কার্ডেও ছিল বিশেষ বৃক্ষপ্রীতি। প্রথাগত ধারায় না গিয়ে তালপাতার পাখাতেই হাতি লিখে লিখে প্রত্যেক অতিথিদের বাড়িতে নেমন্তনের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। আসন্ন গরমে তালপাতার এই পাখা টেনে ঠাণ্ডা বাতাসে তৃপ্তি পাবেন। বাংলার লোকশিল্পের সাথে সাথে আমাদের সনাতনী ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার এক বিশেষ চেষ্টা বলেই মনে করেন এই পরিবার।
অতিথি মানিক পাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনোলজি ম্যানেজার বিষ্ণুপুর ব্লক বীজ উপহার পেয়ে বলেন,'' গাছের উপকারিতা আমরা বলে শেষ করতে পারবো না। তবুও কখনো আমরা বাধ্য হয়ে আবার কখনো মুনাফার কারণে বৃক্ষ ছেদন করে চলেছি। উৎসব অনুষ্ঠানের সাথে সাথে সবুজের প্রতি এ ধরনের ভালোবাসা যত বেশি বেশি করে আমরা মেনে চলতে পারব ততই আমাদের সমাজের মঙ্গল। আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত বৃক্ষ ছেদনের সাথে সাথে নতুন করে বৃক্ষ রোপণ করা এবং সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিনের বৃক্ষগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া ভীষণ জরুরী বলেই মনে করি।এই পরিবারের মত অন্যান্য অনেক পরিবার পরিজন এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ বলেই আমার বিশ্বাস। '' শিক্ষক অরিজিৎ দাস অধিকারী জানান, '' দূষণ দ্রুত বাড়ছে,এই উদ্যোগ একমুঠো মুক্ত বাতাস। এই আবেগের বিকাশ ও বিস্তার ঘটুক। ''