নিউজ ডেস্ক, ঝাড়গ্রাম: পঞ্চায়েত ভোটের একমাস পরই জঙ্গলমহল সফরে ঝাড়গ্রাম এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ঝাড়গ্রাম পৌঁছান। বৈঠক করেন কুড়মি সমাজের নেতাদের সঙ্গে। সেই বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন কুড়মি নেতারা। তারা বলেন, "এর আগের সরকার কোনও কিছু করেনি কুড়মিদের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় অনেক কিছু করেছেন। কুড়মি নেতাদের এই মন্তব্যের পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাদের সমাজের মধ্যেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিচ্ছে এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবিতে চলা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদিও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাত। উল্লেখ্য, নবজোয়ার কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি এলাকায় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির ওপর হামলা এবং প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে কুড়মিদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় রাজেশ মাহাত সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা সকলেই এখন জামিনে মুক্ত। পাশাপাশি রাজেশ মাহাত খড়গপুরের একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকে তাকে বদলি করে পাঠানো হয় কোচবিহারের একটি স্কুলে। বারবার কুড়মিরা এসটি তালিকা ভুক্ত হওয়ার দাবিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেও মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে কার্যত সুর নরম করেছেন কুড়মি নেতারা। এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন আন্দোলনে শামিল হয়েছিল কুড়মিরা। তাদের দাবি ছিল এসটি তালিকাভুক্ত করতে রাজ্য সরকারকে তালিকা পাঠাতে হবে। সেই দাবিকে সামনে রেখেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মিরা লাগাতার আন্দোলন করেছিল এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। ঘাঘর ঘেরা কর্মসূচীতে আটকে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ভোটে ফাঁপরে পড়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি। কুড়মিরা প্রার্থীও দিয়েছিল নির্দল হিসেবে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কুড়মি ভাইদের ভুল বুঝিয়ে অন্য পথে পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা কুড়মিদের পক্ষেই রয়েছেন। এদিনের বৈঠক শেষে কার্যত সেই বার্তাই দিলেন কুড়মি নেতারা। কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাত বলেন, "কুড়মিদের জন্য আগের কোনও সরকার কিছু করেনি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কিছু করেছেন। কুড়মালি ভাষাকে স্বীকৃতি, কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন এবং করম পরবের পূর্ণ ছুটি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম"। তাহলে কি এবার অবরোধ আন্দোলন থেকে সরছে কুড়মিরা? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজেশ মাহাত বলেন, "আন্দোলন আমাদের চলবে। আমরা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের শত্রু নয়, আমরা আমাদের জাতির দাবি নিয়ে হক আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি না মানা হয়"। তবে নিজেদের এসটি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে বারবার রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছিল কুড়মিরা। এদিন বৈঠক শেষে বেরিয়ে ঠিক উল্টো সুর রাজেশের গলায়। তিনি বলেন, "কেন্দ্র সরকার একটি জটিল অবস্থার মধ্যে রেখেছে বিষয়টি। আর যে কারণেই রাজ্য সরকার বুঝতে পারছে না কেন্দ্র কোনটা চাইছে। যার যেটা করণীয় সে অবিলম্বে করুক। দুই সরকারের মধ্যে টালবাহানার জন্য বিলম্বিত হচ্ছে আমাদের দাবি। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বললাম আমাদের দাবির যাতে দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়"।