নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সেন্টার পড়ায় বন্ধ রয়েছে স্কুল। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বিকেল বেলা মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় দেখতে পেলো জঙ্গলে জ্বলছে আগুন। সটান বাড়ি ফিরে এসে বালতিতে জল নিয়ে দৌড় জঙ্গলে। বাড়ির লোকজন কিছুই টের পেল না। আগুন নিভিয়ে বাড়ি ফিরে আবার খেলার মাঠে। মঙ্গলবার একদল ছাত্রের এমনই ঘটনার চিত্র ধরা পড়েছে মেদিনীপুর সদরের এনায়েতপুরে।
বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই ছাত্রদের সমাজসেবার বার্তা দেওয়া হয়। জঙ্গলে আগুন না লাগানোর এবং বাড়ির কাছাকাছি কোথাও আগুন লাগলে যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয় তা নিভিয়ে দিতেও শেখানো হয়েছে যা মনে রেখেছিল পড়ুয়ারা। তাই বাড়ির সামনে জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা দেখেই তা নেভাতে উদ্যোগ নিলো রোহিত আড়ি, প্রেমজিত দোলই, টোটন দোলইরা। এরা প্রত্যেকে গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি মনিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের এনায়েতপুরে। জানা গিয়েছে, এনায়েতপুরের জঙ্গলে দুপুরে কেউ বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ের দিকে যা নজরে আসে খুদে পড়ুয়াদের। তারা বাড়ি থেকে বালতিতে করে জল নিয়ে গিয়ে নেভানোর চেষ্টা করে। জল ছিটিয়ে, গাছের কাঁচা ডালপালা দিয়ে পুরো আগুন নিভিয়ে ফেলে তারা। ওই ছাত্ররা বলে, "বিদ্যালয়ে আমাদের শেখানো হয়েছিল জঙ্গলে আগুন না লাগাতে এবং যদি লেগে যায় তা নিভিয়ে দিতে। তাই আমরা বাড়ির সামনে জঙ্গলে আগুন লাগতে দেখে নিভিয়ে দিই"। গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুভাষ হাজরা বলেন, "ছাত্রদের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এর আগেও বিভিন্ন জঙ্গলে আগুন নিভিয়েছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে থাকে। পড়ুয়ারা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সঠিক পথ দেখানোই আমাদের কর্তব্য"। জঙ্গলে আগুন না লাগানো, বন্যপ্রাণ শিকার না করাসহ পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে স্কুলগুলিতে সচেতনতার শিবির করে বন দফতর। তারই ফল যেন হাতেনাতে মিলছে। চাঁদড়া রেঞ্জের আধিকারিক সৈকত বিশ্বাস বলেন, "স্কুলস্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এখন থেকেই সচেতনতার বীজ রোপন করা গেলে ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণ শিকার, জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনায় ছেদ পড়বে। বন্য পশু পাখি পরিচিতি এবং এদের শিকার বা হত্যা না করে সংরক্ষণের নানা বিষয় আমরা স্কুলগুলিতে সচেতনতা শিবিরে তুলে ধরেছি। পরিবেশ রক্ষা ও বন্যপ্রাণ হত্যা বন্ধ করতে এলাকার শিশুমনেই পরিবেশ প্রেমের বীজ বপণের চেষ্টা চলছে। তাতে আগামী ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়ে উঠবে"। খুদেদের এই কর্মকান্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনিও।