নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুরঃ ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহে যুগাবতার শ্রীশ্রী চৈতন্যদেব নদীয়ার শান্তিপুর থেকে হাজিপুর (ডায়মন্ড হারবার ), তমলুক, নারায়ণগড় ও দাঁতনের সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে পুরী(নীলাচল) তীর্থে গিয়েছিলেন।
দুর্গম যাত্রাপথে সঙ্গে ছিলেন নিত্যানন্দ গোসাই, দামোদর পণ্ডিত, জগদানন্দ , মুকুন্দ গুপ্ত ও গোবিন্দদাস নামে পাঁচজন শিষ্য। চৈতন্য জীবনীকার কবি জয়ানন্দ লিখেছিলেন, " রজনী প্রভাতে স্বর্ণ রেখা নদী / পার হৈয়া উত্তরিলা বারাসতে/ দাঁতিন জলেশ্বর পার হইয়া উত্তরিলা আমরদাতে। "
প্রায় ৫১৪ বছর আগে মহাপ্রভু গমনের সেই অমলিন স্মৃতি দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আজও অটুট । দাঁতন থানার প্রাচীন ইতিহাসপ্রসিদ্ধ কাকরাজিত গ্রামে নির্মিত হয়েছে জেলার বৃহত্তম চৈতন্য মহাপ্রভু মন্দির । বহুকাল ধরে মহাপ্রভুর কাঠের বিগ্রহ সাড়ম্বরে পূজিত হয় এখানে।
এলাকার মানুষ কাকরাজিতের মহাপ্রভুকে জাগ্রত-দেবতা রূপে দেখেন। গ্রামে গ্রামে গৃহস্থের কল্যাণে মহোৎসব উপলক্ষ্যে মহাপ্রভুর বিগ্রহ হাজির হয়। শ্রদ্ধালুরা মানত করেন, মঙ্গল কামনায় বাতাসা ছড়ানো হয়, বলা হয় "হরির-লুঠ"।
দাঁতনের আঞ্চলিক ইতিহাস অন্বেষণকারী সন্তু জানা বলেন, " কথিত আছে, চৈতন্যদেবের ফেলে যাওয়া দাঁতনকাঠি থেকেই এলাকার নাম হয়েছিল "দাঁতন" । এই বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও দাঁতন এলাকায় চৈতন্য মহাপ্রভুর আগমনকে চিরকাল মানুষের মনে স্থায়ী করার প্রচেষ্টাতেই প্রতি বছর কার্তিক মাসে পূর্ণিমা তিথিতে কাকরাজিত মন্দির প্রাঙ্গণে সাড়ম্বরে রাস উৎসব আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা । এই আয়োজন আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের। ''
একাদশী থেকে শুরু হয়ে পাঁচদিন ধরে খোল-করতালের কীর্তন সহযোগে চৈতন্য আরাধনায় জমে ওঠে আলোক-সুসজ্জিত গ্রামীণ মেলা। শুক্রবার রাস পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হবে এই উৎসব। সীমানা পেরিয়ে ওড়িশা সহ ভিন রাজ্য থেকেও কয়েক হাজার ভক্ত ছুটে আসেন।