নিজস্ব প্রতিনিধি: কনকনে ঠান্ডাতে কাঁপছিল দুই শিশু। নজরে আসতেই শীতবস্ত্র কিনতে দোকানে ছুটলেন মহকুমা শাসক সাত সকালেই। বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল মেদিনীপুর শহরে। মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন মেদিনীপুর সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একইভাবে পরিদর্শন করে নানা খোঁজখবর নিয়েছেন। খাবারের গুণগতমান, পঠন-পাঠন সবেরই হিসেব নিয়েছেন তিনি।
জেলাশাসকের নির্দেশে জেলার সমস্ত স্কুলগুলিতে মধ্যাহ্নকালীন আহারের সামগ্রিক অবস্থা ও পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন আধিকারিকরা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, মাধ্যমিক, অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সহ মোট ৬৫ জন আধিকারিক জেলার ৬৯ টি স্কুল পরিদর্শন শুরু করেছেন। ৭ জানুয়ারি থেকে এই পরিদর্শন শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ শে জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আধিকারিকরা জেলার সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে তার রিপোর্ট জমা দেবেন।
বৃহস্পতিবার সকালে আটটা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের শেখপুরা এলাকার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে হাজির হয়েছিলেন মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি। ওই কেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৫০ জন। অনেকেই সেখানে প্রবেশ করেছিল। তার মধ্যে দুজন শিশুর শীতের পোশাক ছিল না। পাতলা পোশাকেই অন্যান্যদের ভিড়ে বসে কাঁপছিল তারা। পরিদর্শনে বেরিয়ে মহকুমা শাসক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দিদিমণিদের কাছে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছিলেন। সমস্ত হিসেব মেলানো ও খাবারের গুণগত মান নিয়ে কথা বলার সময় তার নজরে আসে শীতে কাঁপতে থাকা দুই শিশু। কথা বলে বুঝতে পারেন শীতের পোশাক নেই তাদের। এরপরেই সেই শিশু দুজনকে দিদিমণিদের বলে দেন নজর রাখার জন্য। নিরাপত্তারক্ষী ও সঙ্গে থাকা লোকজনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। গাড়ি নিয়ে মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন দোকানে ছুটে যান। বেশিরভাগ দোকান তখনও খোলেনি। অনেক পরে এক দোকানদারকে পেয়ে দোকান খুলতে অনুরোধ করেন। দোকান খুলিয়ে সেখানে দুই শিশুর জন্য শীতের পোশাক কিনে পুনরায় ফিরে আসেন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। নিজের হাতে দুই শিশুকে পোশাক পরিয়ে দেন। তাদের সঙ্গে গল্পও করেন। দীর্ঘক্ষণ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের খোঁজখবর নেন তিনি। এরপর রওনা দেন অন্যত্র। মহকুমা শাসক বলেন, "বিভিন্ন স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দেখলাম দুই শিশুর গায়ে শীতের পোশাক নেই। তাই নিজেই পোশাক কিনতে বেরিয়েছিলাম। তাদের পোশাক দিয়ে কিছুটা স্বস্তি।" তবে মহকুমা শাসকের এই বিষয়টা স্থানীয়দের নজরে আসে। অনেকেই মোবাইলে সেই মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করেন। মানবিকতার নিদর্শন দেখালেন তিনি।