হরি ঘোষ, দুর্গাপুর: আবাসে 'কাটমানি'র অভিযোগ। নাম জড়াল তৃণমূল নেতার। তবুও মিলল না কেন্দ্রীয় হাউস ফর অল প্রকল্পে বাড়ি। তাই টাকা ফেরত পেতে তৃণমূল নেতার নামে মেইল করে অভিযোগ করলেন প্রতারিত ব্যক্তি। আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু নগর নিগমের ভোট হচ্ছে না অথচ গরিব মানুষের সাথে প্রতারণা চলছেই বলে কটাক্ষে বিজেপির। সত্যিই যদি এরকম ঘটনা হয়ে থাকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে পাল্টা দিল তৃণমূল।
দুর্গাপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভিড়িঙ্গি গ্রাম। সেখানেই থাকেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত ঠিকা কর্মী খোকন প্রামানিক। অভিযোগ, সময়টা ছিল ২০২২। খবর পেলেন আবাসের বাড়ি মিলছে আবেদন করলেই। সাথে সাথে যোগাযোগ করেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক সুধীর বাউরীর সাথে। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা সুধীর বাউরী দাবি করেন আবাসের বাড়ি পেতে হলে দিতে হবে ৩৫ হাজার টাকা। নিজের দায়িত্বে ঠিকদার নিয়ে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতিও দেন তৃণমূল নেতা। ঝক্কি এড়াতে খোকন বাবু ধার দেনা করে তিন দফায় ৩৫ হাজার টাকা তুলে দেন তৃণমূল নেতার হাতে। তারপরেই তৃণমূল নেতার পরামর্শ ছিল সরকারি বাড়ি পেতে হলে ভাঙাচোরা ঐ বাড়ি পুরো মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে ভেঙে। শাসক দলের নেতা বলে কথা, তাই সেই প্রস্তাবে খোকন বাবু মাথা গোঁজার শেষ ভরসাটুকু ভেঙে দিয়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া চলে যান স্ত্রীকে নিয়ে। সেই ২০২২ সাল পেরিয়ে চলে আসে ২০২৫। কিন্তু আবাসের বাড়ি আর মিলল না খোকন প্রামানিকের কপালে। তৃণমূল নেতাকে দেওয়া টাকাও গেল জলে। আজ দেবো কাল দেবো করে নাকি আর টাকা ফেরত দিচ্ছেন না না নেতা, এমনটাই অভিযোগ। আবার ফোন ধরেন না, কিংবা ফোন ধরলেও বিষয়টি এড়িয়ে যান। শেষে বুকে বল নিয়ে মাস ছয়েক আগে দুর্গাপুর নগর নিগমে খোঁজ নিতে যান খোকন প্রামানিক। গিয়ে দেখেন আবাসের তালিকাতে তার নামটাই নেই, এমনকি আবেদনপত্রই জমা পড়েনি দুর্গাপুর নগর নিগমে। তাহলে আবেদনপত্রের প্রতিলিপি যা কিনা সরকারি বাড়ি পেতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন সেই সব গেল কোথায়? উত্তর মেলেনি আজও। তাই বাধ্য হয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশকে মেইল মারফত তৃণমূল নেতা সুধীর বাউরীর নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন খোকন প্রামানিক। তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য রাখি তিওয়ারি। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। দলের একাংশ অভিযোগকারীকে সামনে রেখে তার সাথে ষড়যন্ত্র করছে, পাল্টা অভিযোগ দুর্গাপুর নগর নিগমের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক সুধীর বাউরীর। অভিযোগ মিথ্যে বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেতা। দল এই অন্যায় বরদাস্ত করবে না, অভিযোগকারীকে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। এইদিকে এভাবে শাসক দলের এক নেতার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগকে একযোগে সমালোচনা করলেন বিরোধীরা। আড়াই বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না, অথচ গরিব মানুষের সাথে প্রতারণা অব্যাহত বলে কটাক্ষ করে বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, "যে প্রতারণা করেছে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাকে গ্রেফতার করা দরকার। কাটমানি ছাড়া যে তৃণমূল কোনও কাজই করে না তা আবারও প্রমাণিত"।