এক পায়ে ভর করে ভোটের প্রার্থী! সমবেদনা নয়, মনের জোরেই জয়লাভের বিশ্বাস

চলার সম্বল একটিমাত্র পা। কিন্তু ভোটে তার সম্বল মনের জোর। বাপ-ঠাকুরদার মতোই সিপিআইএম সমর্থক থেকে এবার সে ভোটের প্রার্থী। বদল আনতে পারবে কি শম্ভু?

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
cpimcan

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দ্রকোনা: এক পায়ে ভর করে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সামিল হয়েছে ২৪ বছরের শম্ভু। বছর ২৪- এর বিশেষভাবে সক্ষম শম্ভু সিপিআইএমের প্রার্থী এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এক পায়ে ভর করে প্রতিদিন দলীয় কর্মীদের সাথে ভোটের প্রচার করছে। শম্ভুর মতো কর্মীদের দেখে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পাচ্ছে বাম নেতৃত্ব। সুস্থ সবল বাম কর্মীরা যেখানে প্রার্থী হতে অস্বীকার করেছিল সেখানে এক পায়ে ভর করে চলা শম্ভু ও তার পরিবারের সদস্যরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করেনি, এমনই দলের নেতাদের দাবি।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালা গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু ভাঙ্গি এবারে সিপিআইএমের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে গোপীনাথপুর গ্রাম থেকে। ছোটবেলায় দুর্ঘটনায় বাদ পড়েছে ডান পা। এখন চলাফেরার সম্বল বাঁ পা ও একটি লাঠি। শম্ভুর কথায় বাপ-ঠাকুরদারা সিপিআইএমের সক্রীয় কর্মী। সিপিআইএমকে সমর্থন করার ফলে ২০১১ সালে সরকারে পালাবদলের পর থেকে শাসকদল তৃণমূল ক্ষমতায় আসলেও শম্ভুর পরিবার পায়নি কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা, এমনটাই অভিযোগ শম্ভুর। আর সেই ঘৃণা থেকেই এবারের পঞ্চায়েতে নির্বাচনে বামেদের হয়ে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় শম্ভু ভাঙ্গি। 

তৃণমূলের দুর্নীতি, এলাকার অনুন্নয়নকে সামনে রেখে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে শম্ভু। কখনও দলীয় কর্মীদের বাইকে চেপে আবার কখনও লাঠিকে সম্বল করে কর্মীদের সাথে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গ্রামে ঘুরে প্রচার করছে সিপিআইএমের এই তরুণ প্রার্থী। বাবা পেশায় ক্ষুদ্র কৃষক, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন নেই। নিখাদ দরিদ্র পরিবারের ছেলে প্রতিবন্ধী শম্ভু। তবে সে জানাচ্ছে তার বাপ-ঠাকুরদা সিপিআইএম করত, তৃণমূল জমানাতেও পুরো পরিবার সিপিআইএম ঘরানার। দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করার তাগিদে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে লাল ঝান্ডা ধরেই ভোটে লড়ে জয়ী হবে, এতোটাই আশাবাদী শম্ভু ও তার বাবা। নিজের বাড়ি থেকে দূরে অন্য একটি গ্রামের প্রার্থী হয়ে বামেদের জন্য লড়াই শুরু করেছে বছর ২৪ এর শম্ভু ভাঙ্গি। 

এলাকার সিপিআইএমের নেতা-কর্মীরাও আশাবাদী যে ভোটে জয় হাসিল করবে তাদের প্রার্থী শম্ভু। তাই প্রার্থীকে সহায়তা করার জন্য দিনভর তারা শম্ভুকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। শম্ভুর আগামী দিনের কী চিন্তাভাবনা ও কাজ করার পরিকল্পনা সেগুলো জানিয়ে ও সেই সাথে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, এলাকার অনুন্নয়নের দিকগুলি তুলে ধরে তা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছে অন্যান্য নেতারা। এখন অপেক্ষা ১১ই জুলাইয়ের। মানুষের মনে কতটা দাগ কাটতে পারে সিপিআইএমের এই বিশেষভাবে সক্ষম তরুণ প্রার্থী শম্ভু ভাঙ্গি সেটাই দেখার।