নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: ভোটের মুখে রাস্তা নিয়ে প্রশাসনের অসহযোগিতায় সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের ১৫ নম্বর এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরিষাখোলা, রোশনচক সহ বেশকিছু জায়গায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে পথশ্রী প্রকল্পে তৃতীয় দফার কাজ হওয়ার কথা, যা ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। সরকারি নিয়মমাফিক সমস্ত কাজ এগিয়ে চলছিল তার গতিতেই। কিন্তু বাধা প্রশাসনিক অসহযোগিতা। এরকমই অভিযোগ পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তার কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারের। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
কেশপুর ব্লকের ৪/৫ টি গ্রামে পথশ্রী প্রকল্পের বোর্ড পড়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি রাস্তার। কেশপুর ব্লকের এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অযোধ্যাবাড় হইতে ঘোষডিহা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজ শুরুর তারিখ দিয়ে ইতিমধ্যে বোর্ডও লেগে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একবিন্দু কাজও শুরু করতে পারেনি কন্ট্রাক্টার। এরকমই অভিযোগ কন্ট্রাক্টারের। পাশাপাশি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই অন্তর্গত রোশনচক মনসা মন্দিরের কাছে প্রায় আড়াই কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে যার কাজ শুরু করার তারিখ রয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। এর বাইরে আরও ২/৩ টি রাস্তা এই একই রকম ভাবে বরাদ্দ হয়েও কাজ শুরুর তারিখ দিয়ে বোর্ড লাগানো হয়ে গেছে গ্রামের রাস্তায়, কিন্তু কাজ একবিন্দুও হয়নি। ঠিকাদার জানান, রাস্তার কাজের জন্য প্রয়োজন মোরাম, মোরামের জন্য সরকারি নিয়ম মেনে ভূমি দফতরে সমস্ত নথি জমা দেওয়া, রয়্যালটি দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু ভূমি দফতর থেকে মোরাম কাটার লিখিত অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে না, শুধুমাত্র গ্রিপস চালান দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে লিখিত অনুমতিপত্র ছাড়া পুলিশ মোরাম বোঝাই গাড়ি চলতে দেবে না বলে জানিয়েছে। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তার কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার রাজিব পাল।
অন্যদিকে রাস্তার কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার অবস্থা বেহাল, সাধারণ মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সমস্যার কথা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজের কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত "দিদিকে বলো"তে ফোন করে জানানোর পরে তৃতীয় দফার পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তা তৈরীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর তার ফলে বোর্ড লেগেছে এলাকায়, কিন্তু আজ অবধি কাজই শুরু হয়নি। ফলে যে সমস্যা ছিল সেই সমস্যাতেই রয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিন্তা করছে না কেউ, অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। ভোট আসে, আর ভোট যায় সাধারণ মানুষ শুধু প্রতিশ্রুতি পায়, এরকমই অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের। কবে কাজ শুরু হবে এটাই প্রশ্ন ওই এলাকার মানুষের। অন্যদিকে এই বিষয়ে মেদিনীপুর সদর মহকুমা ভূমি দফতরের আধিকারিক আবু তালেব গাজী জানান, ভূমি দফতর থেকে গ্রিপস চালানই ইস্যু করা হয়, কোনো লিখিত অনুমতিপত্র দেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই কাজ হচ্ছে। তবে পুলিশের দিক থেকে কি হচ্ছে? যদিও এই বিষয়ে পঞ্চায়েত দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, তিনি বিডিওকে জানাবেন বিষয়টি দেখে নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবং যদি ভূমি দফতরের জেলা বা ব্লকের অনুমতি থাকে, তাহলে CO দেখে পুলিশ প্রশাসনের ছেড়ে দেওয়া উচিৎ বলেও জানান তিনি। তবে পুলিশ ও ভূমি দফতরের নিয়মের বেড়াজালে আটকে পথশ্রী প্রকল্পের সরকারি রাস্তার কাজ। কবে শুরু হবে রাস্তার কাজ তা জানেন না গ্রামবাসী থেকে ঠিকাদার।