নিজস্ব সংবাদাতা, লাউদোহা: মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের দুর্গাপুজো নজর কাড়ে আপামর জনতার। হিন্দুদের দুর্গাপুজোতে সামিল হন মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু পুরুষ ও মহিলা। অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি পুজোর তদারকিও করেন তারা। তাইতো এই পুজো খনি অঞ্চলে একটি সম্প্রীতির নজির রাখে । বর্তমান সময়ে যেখানে রাজনীতির নাগপাশে কয়েকটি জাতিকে নিয়ে চলে রাজনীতি, যেখানে ভারতবর্ষের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে দুর্গাপুজা নিয়ে হয়েছে নানান বিধি নিষেধ। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের তিলাবনী গ্রামের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সার্বজনীন এই দুর্গা পুজো সম্প্রীতির বার্তা রাখে।
শরৎকাল মানেই দুর্গাপুজো, আর দুর্গাপুজো মানেই সকালের শিশিরের বিন্দু এবং ঠান্ডার আমেজ। পাশাপাশি যেদিকেই চোখ যায় শুধু কাশবন। প্রকৃতি নতুনভাবে সেজে ওঠে। প্রকৃতিই যেন এই সময় জানান দেয় যে ' মা আসছেন '। চারিদিকেই সাজো সাজো রব। দুর্গাপুজো নিয়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে দুর্গা পুজো কমিটিগুলিরও।
ব্যতিক্রম নয় দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের তিলাবনি গ্রামও। গ্রামের একমাত্র সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি এবার তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করল। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি শেখ সাদেক, সম্পাদক বরুণ নায়ক ও সেক সঈদ আহমদরা জানন, ' ২০২২ সালে এখানে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। এই তিলাবনি গ্রামে রয়েছে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ৩০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। ' বরুণ বাবু জানান, '' এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরাই গ্রামের আশে পাশের গ্রামেগুলোতে দুর্গাপুজো হচ্ছে অথচ তাদের গ্রামে হচ্ছে না, এই নিয়ে গ্রামের হিন্দুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা জানান যে দুর্গাপুজোয় অনেক খরচ, তাই সেটা করা অত সহজ নয়। '' বরুণ বাবু আরও বলেন, '' সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরাই উদ্যোগী হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেদের আশ্বাস দেন যে ' পুজো শুরু করুন আমরা আছি '। আর তারপর থেকেই এই গ্রামের পূজোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা অংশ নেন। শুরু হয় মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের দুর্গাপুজো। আর্থিক সাহায্য ছাড়াও পুজোর বিভিন্ন কাজে তদারকিও করে থাকেন তারা।
এই পুজোর পুরোহিত তপন চক্রবর্তী আসেন পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঝাঁঝরা থেকে। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি শেখ সাদেক, সম্পাদক বরুন নায়ক ও সঈদ আহমদরা জানান, ' তাদের গ্রামের এই পুজো ঘিরে পুজো চারদিন চরম আনন্দে কাটান হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা। শেখ সাদেক বলেন, '' আমরা যেমন হিন্দুদের উৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি পাশাপাশি এই গ্রামের হিন্দুরাও আমাদের সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন। গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের সৌভাতৃত্ব নজর কাড়ে এলাকায়। '' পুজোর চারদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। তবে তারা কোনো রকম সরকারি সাহায্য এখনো পান না তারা। সেটা হলে আগামী বছর থেকে তাদের এই পুজোর গরিমা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী তারা।