বেআইনি দখলদারিতে শতাধিক বিঘা জমি জলের তলায়, দুর্দশা চাষীদের

দুর্দশা চাষীদের।

author-image
Adrita
New Update
হ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামুরিয়াঃ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া বিধানসভার অন্তর্গত ধসল গ্রাম আজ এক গভীর সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের চাষযোগ্য শতাধিক বিঘা জমি আজ সম্পূর্ণ জলমগ্ন। তবে এই সমস্যার মূল কারণ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং স্থানীয় একটি বেসরকারি কারখানার বেআইনি দখলদারি। 

গ্রামের বাইরে দিয়ে বয়ে চলা একটি ছোট নদী, যা সিঙ্গারন নদীর শাখা হিসেবে পরিচিত, সেটির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে স্পিনটেক টিউব প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কারখানা। এর ফলে বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল ধসল গ্রামের ফসলি জমিতে জমা হচ্ছে। জল নামার কোনো পথ না থাকায় বিঘার পর বিঘা জমি আজ চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একসময় ধান, আলু, শাকসবজি চাষের জন্য বিখ্যাত এই জমিগুলি এখন জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

গ্রামের চাষী অনিল বাউরী, আনন্দ মাঝি, বংশী পাল, মহেশ ওঝা, সুনীল হাজদা সহ অনেকেই জানিয়েছেন যে, '' গত দুবছর ধরে তারা এই পরিস্থিতির সম্মুখীন। ধসল গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, কিন্তু তাতেও কোনো সমাধান মেলেনি। ফলে তারা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। ঋণের বোঝা ক্রমশই বাড়ছে, আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের বেঁচে থাকার পথ আরও কঠিন করে তুলছে। '' 

জলমগ্ন জমিগুলি একসময় তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল। সেই জমি আজ দেখলে তাদের চোখে জল এসে যায়। নদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের জমি আর চাষযোগ্য নয়। জল জমে থাকায় তারা বিগত দুবছর ধরে কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না। তাদের এই দুর্দশার জন্য স্থানীয় কারখানার বেআইনি দখলদারিকে তারা দায়ী করছেন।

এই বেআইনি কাজ শুধু চাষীদের আর্থিক ক্ষতিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং আশেপাশের এলাকার পরিবেশের উপরও প্রভাব ফেলছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশেপাশের বাস্তুতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাভূমি তৈরি হওয়ার ফলে মশার উপদ্রব বেড়েছে, যা গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চাষীরা অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। তারা চাইছেন, প্রশাসন যেন কারখানার বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ পুনরায় চালু করে। তবেই তাদের জমি ফের চাষযোগ্য হয়ে উঠবে এবং তারা আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।

জামুরিয়ার বিডিও অরুনা লোক ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মদক্ষ জগন্নাথ সেট জানিয়েছেন, আগামীকাল এই সমস্যা নিয়ে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, স্পিনটেক টিউব প্রাইভেট লিমিটেড-এর আধিকারিক হেমন্ত সিং জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেছেন, তাদের পক্ষ থেকে কোনোভাবেই নদীর গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হয়নি।

এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান চাইছেন ধসল গ্রামের চাষীরা। যদি সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে চাষীদের এই দুর্দশা দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা তাদের জীবনের উপর আরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করে এবং চাষীদের জমি ও জীবিকা পুনরুদ্ধার করতে পারে।