নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: ভেঙে ঝুলছে ছাদ, বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুল ভবন। বছরের পর বছর কেটে গেলেও বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ওই ভবন ভেঙে ফেলা ও নতুন ভবন তৈরির আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি। পাশেই একটি মাত্র ভবনে বেঞ্চে বসিয়ে, আবার কিছু পড়ুয়াকে মেঝেতে বসিয়ে গাদাগাদি করে চলছে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস। লাটে উঠছে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন। দ্রুত ভগ্নপ্রায় স্কুল ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরির দাবি অভিভাবক থেকে স্কুলের শিক্ষিকাদের।
প্রাথমিক স্কুলের এমন ভগ্নদশার ছবি দেখলে আঁতকে উঠবে যে কেউ। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাঁশদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। আগে সংখ্যাটা বেশি থাকলেও বর্তমানে এই স্কুলে ৩৭ জন ছাত্র-ছাত্রী, ২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১ জন প্যারাটিচার রয়েছেন। মিড ডে মিলের জন্য রয়েছে ২ জন রাঁধুনি। জানা যায়, ১৯৫৯ সালে স্থাপিত হয় বাঁশদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি মাত্র ভবনে চলতো পঠন-পাঠন। ২০০৭ সালে পাশেই তৈরি হয় নতুন একটি স্কুল ভবন। ২০১০ সালের আগে পুরোনো স্কুল ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয় এবং তারপর থেকেই একটু একটু করে বর্তমানে পুরো স্কুল ভবনটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওই ভবনের ভিতরে কংক্রিটের ছাদ ভেঙে ঝুলছে, দেওয়ালের ভিতরে ও বাইরে একাধিক জায়গায় বড়ো বড়ো ফাটল তৈরি হয়েছে।
স্কুলের তরফে জানানো হয় যে ২০১০ সাল থেকেই তালা পড়ে যায় পুরনো ভবনটিতে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই ভবনটি। বর্ষার মরসুম তাই যে কোনও দিন পুরনো ওই ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়ে ওই ভবনের দুয়ারে চলে যায় ক্ষুদে স্কুল পড়ুয়ারা। বড়সড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে পড়ুয়া থেকে যে কেউ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রত্না কুন্ডু সেন জানান, '২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় পৌরসভা, বিডিও, ব্লকের স্কুল পরিদর্শক থেকে DPSC তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কাউন্সিলের কাছে একাধিকবার লিখিত আকারে আবেদন করা হয় পুরানো ভগ্নপ্রায় ভবনটি ভেঙে ফেলা এবং শ্রেণি কক্ষ বাড়ানোর জন্য। সমস্ত দফতরে জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি তাদের তরফে। বাধ্য হয়ে পাশের ভবনটিতে একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষেই স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা থেকে সেখানেই গাদাগাদি করে একসাথে সমস্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে'। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে সেটা মেনে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষিকারাও।
এভাবে স্কুলের পঠনপাঠনে অখুশি অভিভাবকরাও। তাদের কথায়, 'ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কারণ শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়ে যদি ছেলে-মেয়েরা ভাঙাচোরা ভবনের দিকে চলে যায় তাহলে কোনও দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে'। আর একটি রুমে সব ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস নিতে হওয়ায় আদৌ তাদের ছেলে-মেয়েরা কিছু বুঝতে বা শিখতে পারে কিনা সন্দেহে অভিভাবকদের। দ্রুত ওই ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন একটি ভবন তৈরির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শৌচাগার থেকে মিড ডে মিলের রান্নাঘর সবই স্কুল চত্বরে থাকলেও নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম। তার উপর পাশেই বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভগ্নদশা অবস্থায় থাকা স্কুল ভবনটি। ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের প্রহর গোনার সাথেই একপ্রকার যেন তেন প্রকারেণ ক্ষুদে পড়ুয়াদের পাঠদান চলছে বাঁশদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কবে প্রশাসনের হুঁশ ফেরে সেদিকেই তাকিয়ে সকলেই।
এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর সৌরভ চক্রবর্তী জানান, 'আমি ৬ মাস দায়িত্বে এসেছি। তার আগে থেকেই এই সমস্যা। যে কোনও মুহুর্তে বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে স্কুলের সভাপতিসহ সকলকে নিয়ে স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছি যাতে দ্রুত ওই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় এবং নতুন শ্রেণি কক্ষ তৈরি করে দেওয়া হয়। আমি আশাবাদী দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে'। স্কুলের এহেন সমস্যা ও বেহাল দশার কথা মেনে নিয়েছেন চন্দ্রকোনা-২ চক্রের স্কুল পরিদর্শক দীপাঞ্জন মন্ডল। তিনি বলেন, 'স্কুলের তরফে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল নতুন শ্রেণি কক্ষ তৈরির জন্য। সেইমতো আমরা ভেটিং করে DPSC এবং সর্বশিক্ষা মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্যও আমরা অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। এখনও কোনও অনুমতি মেলেনি। তা পেয়ে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।