সরকারি রাস্তা ও নদী দখল, স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তেজনা এলাকায়

উত্তেজনা এলাকায়।

author-image
Adrita
New Update
্বে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামুরিয়াঃ জামুরিয়া থানার অন্তর্গত বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধসল গ্রামে সরকারি রেকর্ডেড রাস্তা দখল এবং ছোট নদী জোরপূর্বক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয়রা চরম বিপাকে পড়েছেন। চাষযোগ্য জমিতে জল জমে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে কোনো চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এরই প্রতিবাদে স্পিনটেক ডিউ প্রাইভেট লিমিটেড কারখানার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহেশ ওঝা জানান, '' কয়েক বছর আগে স্পিনটেক ডিউ প্রাইভেট লিমিটেড কারখানার কর্তৃপক্ষ গ্রামের জমি চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে গ্রামের উন্নয়ন করা হবে এবং স্থানীয় বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কারখানাটি ধসল মৌজার দুটি রেকর্ডেড রাস্তা, একটি ৫৬ নম্বর মানচিত্রে এবং অপরটি ২ ও ৩ নম্বর মানচিত্রে অবস্থিত, সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। '' 

আরও বড় অভিযোগ উঠেছে, গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছোট নদীকে অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় ধসল, বাহাদুরপুর, বিজয়নগর, ও ঢাসনা মৌজার অতিরিক্ত বর্ষার জল সিঙ্গারন নদীতে নিয়ে যেত। কিন্তু কারখানার দখলের ফলে শতাধিক বিঘা জমি এখন জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে গত দুই বছর ধরে এই জমিতে কোনো চাষ করা সম্ভব হয়নি, যা কৃষকদের জন্য মহাবিপদ ডেকে এনেছে। আন্দোলনকারী আনন্দ মাঝি, সুনীল হাঁসদা, এবং মনবোধ রুজ জানান, '' কারখানার কারণে গ্রামের আদিবাসী শ্মশানটি পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। বহু পুরনো এই শ্মশানটি দখল করে কারখানা কর্তৃপক্ষ রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। ফলে এখন আদিবাসীরা মৃতদেহ সৎকারের জন্য জায়গা পাচ্ছেন না। '' স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা স্থানীয় যুবকদের নিয়োগ না করে প্রায় ৭০০ বহিরাগত শ্রমিক নিয়োগ করেছে। স্থানীয় যুবকরা যখন কাজের জন্য আবেদন করেন, তখন তাদেরকে অন্য রাজ্যের আধার কার্ড জমা দিতে বলা হয়। ফলে স্থানীয়রা সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গ্রামবাসীরা বহুবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যেমন: বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, বিডিও, ভূমি দপ্তর, জামুরিয়া থানা, এডিএম (এলআর), এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা দাবি করছেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ শতাধিক বিঘা খাস জমি বেআইনিভাবে দখল করেছে।

জামুরিয়া ভূমি দপ্তরের রেভিনিউ আধিকারিক পরিতোষ মন্ডল জানান, নদীকে কোনোভাবেই কারখানার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তিনি জানান বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, জামুরিয়া সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) অরুনালোক ঘোষ জানান, তিনি এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদী দখল করার বিষয়টি তার জানা নেই।

স্পিনটেক ডিউ প্রাইভেট লিমিটেডের আধিকারিক হেমন্ত সিং অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, কোনো খাস জমি বা নদী তারা দখল করেননি। তাদের বাউন্ডারির ভেতরে কোনো গ্রামের জমি নেই বলে তিনি জানান।

এদিকে, স্থানীয়দের বিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এবং প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, যদি দ্রুত কোনো সমাধান না আসে, তবে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।