নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ একযোগে গ্রামের স্কুলকে জমি দান করে নজির সৃষ্টি করল ৬৪ জন গ্রামবাসী। স্কুলেই প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে শিবির করে জমিদাতাদের জমি স্কুলের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে দেওয়া হয়। হাসিমুখে বিনামুল্যে ৬৪ জন জমিদাতা গ্রামবাসী রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে সই স্বাক্ষর করে দেন। এই ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বলেই মত প্রশাসন থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের। এমনই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের (Chandrakona) লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুদাসপুর গ্রামের ৬৪ জন গ্রামবাসী।
জানা যায়, বিষ্ণুদাসপুর গ্রামে থাকে ১৬০টি পরিবার। তারমধ্যে ৬৪ জন গ্রামবাসী একযোগে তাদের অংশের একটি জায়গা গ্রামের বিষ্ণুদাসপুর বিবেক ভারতী বিদ্যামন্দির স্কুলকে দান করলেন। ৬৪ জন গ্রামবাসীর অংশীদারিত্বে থাকা মোট ৬৮ শতক একটি জায়গা স্কুলকে দান করেন। স্কুলে কোনো খেলার মাঠ ছিল না। তবে গ্রামবাসীর দান করা ৬৮ শতক জায়গা আপাতত স্কুলের খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হবে বলে স্কুলের তরফে জানানো হয়। জানা গিয়েছে, বিষ্ণুদাসপুর বিবেক ভারতী বিদ্যামন্দির স্কুলটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিষ্ণুদাসপুর গ্রামে। এই স্কুলে ২২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। বিনামূল্যে গ্রামের ৬৪ জন গ্রামবাসী স্কুলকে তাদের অংশের জমি দান করেন। এমনকি স্কুলে রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়েও গ্রামবাসী কোনওরকম যাতায়াত খরচও নেয়নি বলে স্কুলের তরফে জানানো হয়। কিন্তু কেনো গ্রামের এতসংখ্যক মানুষ স্কুলকে জমি দানের এই উদ্যোগ নিলেন? তাদের একটাই কথা, গ্রামের বিদ্যালয়ের উন্নতি ও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রবিবার দুপুরে ছুটির দিনে বিষ্ণুদাসপুর বিবেক ভারতী বিদ্যামন্দিরে (মাধ্যমিক) স্কুলে জমি রেজিষ্ট্রেশন শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রশাসনের তরফে উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী, চন্দ্রকোনার রেজিষ্ট্রেশন অফিসার অমিত গোস্বামী সহ তার দপ্তরের কর্মীরা,লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শঙ্কর চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্কুলের টিআইসি সুশীল কুমার পাঁজা সহ স্কুল কর্তৃপক্ষ। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গ্রামবাসীদের দান করা জমি রেজিষ্ট্রেশনের জন্য যে খরচ লাগতো তা মকুব হয়েছে, সেজন্য স্কুলের তরফে ব্লকের বিডিওকে লিখিত আবেদন করা হলে বিডিও উদ্যোগ নিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের স্ট্যাম্প ডিউটি মকুবের ব্যবস্থা করেন। গ্রামবাসীদের এহেন উদ্যোগে সবরকম সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন। এ বিষয়ে ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী জানান, 'স্কুলে জায়গার একটা সংকট ছিল ওনারা চেষ্টা করছিলেন। গ্রামের ৬৪ জন মানুষ একত্রিত হয়ে ৬৮ শতক জায়গা স্কুলকে স্বেচ্ছায় দান করায় স্কুল উপকৃত হল। আজকের দিনে গরীব মানুষের যেখানে জায়গার এতো সংকট সেখানে স্বেচ্ছায় গ্রামের মানুষের স্কুলকে জায়গা দান এক অভিনব উদ্যোগ, ওদের সকলকেই সাধুবাদ জানাই।"