বঞ্চিত! সরকারি সহায়তার আশায় একাকী বৃদ্ধা

দুর্যোগে মাথার ওপর ছাদ হারিয়েছেন একাকী বৃদ্ধা। সরকারি সাহায্যের আশায় কাটছে দিন। মাথার ওপর নেই ছাদ। ভরসা প্রতিবেশীরা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? পশ্চিম মেদিনীপুরে অসহায় বৃদ্ধার কাহিনী আপনারও চোখে জল আনবে।

author-image
Pallabi Sanyal
আপডেট করা হয়েছে
New Update
ff

 
দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্র বা সরকারের দায়বদ্ধতা তাদের বাসস্থান-খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া,আর তা থেকেই বঞ্চিত ঘাটালের এক ষাটোর্ধ্ব বিধবা বৃদ্ধা।সরকারি ন্যূনতম পরিষেবা থেকে তো বঞ্চিতই,মাথা গোঁজার একচিলতে বাড়িটুকু হারিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে।ভরা বর্ষায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক ছেলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে বৃদ্ধার আশ্রয়স্থল বর্তমানে প্রতিবেশীদের বাড়িতে।সরকারের দুয়ারে কড়া নেড়েও অন্ন, বাসস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় চরম কষ্টে দিন কাটছে ষাটোর্ধ্ব সন্ধ্যা দিকপতির।আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশীরাও চাইছেন এবার অন্তত প্রশাসন সন্ধ্যাদেবীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সরকারি সহায়তা প্রদান থেকে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দিক।

 

 ঘাটাল ব্লকের সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইনাতপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সন্ধ্যা দিকপতি। সন্ধ্যাদেবীর স্বামী বছর কুড়ি আগেই মারা গিয়েছেন,সন্ধ্যাদেবীর দুই মেয়ে ও এক ছেলে।দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন,এক ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন।গ্রামেই একচিলতে মাটির বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সন্ধ্যা দিকপতি,ভিক্ষা বৃত্তি করে কোনো রকমে দিন কাটত অসহায় বিধবা বৃদ্ধা সন্ধ্যা দেবীর। শেষ সম্বল মাথা গোঁজার বসতবাড়িটি কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে পড়ে,সম্পূর্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তিনি ও তার প্রতিবন্ধী ছেলে।রেশনের চালটুকু মিললেও মেলেনি কোনো ভাতা,মাথা গোঁজার আশ্রয় টুকু পাওয়ার জন্য দপ্তরে ঘুরেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে এমনই জানা গেছে। অসহায় বৃদ্ধা সন্ধ্যা দিকপতিকে তাদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন প্রতিবেশী  সোনা বাগ,চম্পা বাগ।তাদের কথায়, ''আমরা আর কতদিন থাকতে দিতে পারবো বলুন বর্ষা আসছে নিজেদেরই থাকার জায়গা নেই,আপনারা একটু ওর কিছু ব্যবস্থা করে দিন।অনেক দিন হয়ে গেল আমাদের বাড়িতে আছে,কেউ তো গুরুত্ব দিচ্ছে না।আমরাও তো গরীব মানুষ, আমরা আর কতদিন থাকতে দিতে পারবো।"গ্রামেরই এক বাসিন্দা তিলক দিকপতি জানান, ''একটি গাছ পড়ে ওই বৃদ্ধার বাড়িটি ভেঙে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।খুব অসহায় ওই বৃদ্ধা ভিক্ষা করে খায়,থাকার জায়গা নেই,এখন বর্ষাকাল সে থাকবে কোথায়।এখন ওর থাকার জন্য কিছু যদি সাহায্য করে ঘরটি করে দেওয়া যায় খুব উপকৃত হয়।"অসহায় সন্ধ্যা দেবীর পাড়া প্রতিবেশীরা বলছেন, সবাইকে বলা হয়েছে কিন্তু কেউ কোনো গুরুত্ব দেয়নি,তারাও দাবি জানাচ্ছেন ওই বৃদ্ধার থাকার একটা বাড়ি করে দেওয়ার জন্য।আর নিজের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে চোখে জল সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধা সন্ধ্যা দিকপতির।সন্ধ্যা দেবী বলেন,''বাড়ি পড়ে গেছে, আমি থাকতে পাইনি। বিরাট অসুবিধা।দুটো মেয়ে,এক নাবালক ছেলে,আমি নিজে থাকতে পাইনি।ছেলে অসুস্থ তাই তাকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছি,আমি লোকের বাড়িতে থাকি।সমস্যার কথা কি প্রশাসন বা স্থানীয় প্রধানকে জানিয়ে ছিলেন?উত্তরে সন্ধ্যা দিকপতি বলেন,সবাইকে বলা হয়েছিল তারা কিছু বলেনি।"পাড়া প্রতিবেশীরা সন্ধ্যা দেবীকে আশ্রয় দিয়ে পাশে থাকলেও তারাও আর কতদিন রাখবে সে-নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় প্রতিবেশীরা।প্রশাসন সন্ধ্যা দেবীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিক এই দাবি তুলেছেন প্রতিবেশী থেকে গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও।এবিষয়ে সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান বিশ্বজিৎ বারিক বলেন,''সত্যি তিনি কষ্টের মধ্যে রয়েছেন,ঝড়ে একটি বিরাট গাছ ওই মহিলার বাড়ির উপর পড়ে গিয়ে বাড়িটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে,তৎকালিন সময় আমরা গিয়ে গাছ কেটে সরানো থেকে সাময়িক সাহায্য করেছিলাম।তবে এক্ষুনি বাড়ি করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের নেই,আপাতত ওই জায়গায় খুঁটি বসিয়ে ত্রিপল দিয়ে ঘিরে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারে,এনিয়ে বিডিও সাহেবকেও জানানো হবে।"এখন দেখার সহায়সম্বলহীন অসহায় বৃদ্ধার জন্য কবে টনক নড়ে প্রশাসনের সেদিকে নজর থাকবে আমাদের।