অশ্লীল ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বের হতে কী করলেন প্রেমিকা

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক! মোবাইলে থাকা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও দেখিয়ে প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেল করছিল প্রেমিক। প্রেমিকা ও তাঁর দাদার হাতে খুন হতে হল প্রেমিককে।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
durgapur murder.jpg

নিজস্ব সংবাদদাতা:  বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ফরিদপুর বাউরি পাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার বাড়ি থেকে বিহারের  এক যুবকের পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ।  জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম ছোটন দুবে। তিনি বিহারের বাসিন্দা। পুলিশ গিয়ে দেখে, যুবকের দেহটি যে ঘরে ছিল, তা বাইরে তালাবন্ধ।  তা দেখেই দুর্গাপুর থানার তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় এই ঘটনা খুনের। তদন্তে নেমে পুলিশ ছোটন দুবের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে। সেখানেই পাওয়া যায় দুর্গাপুর থানা এলাকার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পাণ্ডের স্ত্রী পূজা পাণ্ডের মোবাইল নম্বর। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। পূজা পাণ্ডেকে ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ায় নিজের বাড়ির সামনে থেকে আটক করে। এরপরে দুর্গাপুর মহিলা থানার পুলিশ ও তদন্তকারী অফিসারদের  জিজ্ঞাসাবাদের সামনে ছোটন দুবেকে খুনের কথা স্বীকার করেন পূজা পাণ্ডে। তিনি জানান, এই কাজে তাঁর দাদা সঙ্গে ছিল।  কেন ও কীভাবে পূজা ও তার দাদা মিতিন পাণ্ডে খুন করেছিল সেটাও পুলিশকে জানান।

ছোটনের দেহ যে ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে মহিলাদের একটি সোনালি রঙয়ের কানের দুল পাওয়া গিয়েছিল। ফরেনসিক দফতরের আধিকারিকরা তা বাজেয়াপ্তও করেছিল। পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে, ছোটন দুবের সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সেই সময় দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিল ছোটন। পূজার স্বামী ছোটনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর তাদের প্রায় অশান্তি হতো। 

পূজার স্বামী কিশোর পাণ্ডে পুরুলিয়াতে নিরাপত্তীরক্ষীর কাজ করেন। গত কয়েকদিন আগে  রাজস্থানের একটি হোটেলে কাজ করা পূজার দাদা মিতিন পাণ্ডে ধান্দাবাগে পূজার বাড়িতে আসেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজা যখন ছোটন দুবের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন, তখন ছোটন পূজাকে মোবাইলে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছিলেন। তাই পূজা তাঁর দাদা মিতিনকে নিয়ে ছোটনকে খুনের পরিকল্পনা করে। এরপরেই ছোটনকে ডাকা হয় দুর্গাপুরে। 

পুলিশের অনুমান গত মঙ্গলবার মিতিন ও পূজা রাতের অন্ধকারে ফরিদপুরে ওই ভাড়া বাড়িতে ছোটনের কাছে যায়। এখানে ছোটনকে  প্রচুর মদ খাইয়ে গলা টিপে তাকে খুন করা হয়। মোবাইল ফোন,আধার কার্ড সহ কিছু নথিপত্র নিয়ে  মিতিন এবং পূজা বেরিয়ে যায়।  বাইরে থেকে তালা দিয়ে ধান্ডাবাগের ঘরে ফিরে আসেন তাঁরা।শুক্রবার সকালে মিতিন পালিয়ে যায় দুর্গাপুর থেকে।এরপরে দুর্গাপুর থানার পুলিশ ও মহিলা পুলিশ নিয়ে গিয়ে পূজাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজা পুলিশি জেরাই স্বীকার করেছে যে, ছোটনের মোবাইলে তার বেশ কিছু নগ্ন ছবি ছিল। সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল ছোটন। সেই কারণেই তাঁকে খুন করতে বাধ্য হয়। পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাইছিল পূজা। কিন্তু  ছোটনের মোবাইলে থাকা তার বেশ কিছু আপত্তিকর ছবি নিয়ে এই ছোটন তাকে ব্ল্যাকমেইল করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য চাপ দিচ্ছিল। পূজার দাদা মিতিন পালিয়ে যায়। এরপর পুলিশ পূজার দাদা মিতিনের খোঁজে মালদা রওনা দেয়। পুলিশ সুত্রে খবর, শনিবার সকালে মালদা থেকে মিতিনকে  গ্রেফতার করে দুর্গাপুরে আনা হচ্ছে। পূজাকে আজ দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়।