পঞ্চায়েত ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না! হাতির হানায় বাড়ি ভেঙে এখন উদ্বাস্তু 'তারা'
বাড়ি ঘর ভেঙেছে হাতি, কারোও আড়াই বছর আগে তো কারোও ছয়-সাত মাস আগে। মোট পাঁচটি পরিবার এখন বাকড়া কর্মতীর্থের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন।কিন্তু নিজেদের বাড়ি কবে পাবেন?
নিজস্ব প্রতিনিধি: ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল ঝাঁ চকচকে কর্মতীর্থ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল একাধিক দোকান বিশিষ্ট আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত একটি বিপণি তৈরি করা। মূলত স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয় এই কর্মতীর্থগুলি। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা অঞ্চলের বাকড়া এলাকায় গড়ে ওঠা কর্মতীর্থ এখন উদ্বাস্তু শিবির। কারণ হাতির হানায় ভেঙে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের এখানে ঠাঁই দিয়েছে বনদফতর ও প্রশাসন। তাও প্রায় আড়াই বছর হতে চলল।
হাতির হানায় ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর কবে ঠিক করে দেবে প্রশাসন তার কোনও জবাব নেই। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে চুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শশাঙ্ক হালদার ও বাবুরাম বিশ্বাসের বাড়ি ভেঙে তছনছ করেছিল দাঁতাল হাতির দল। পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল তাঁদের। সেই সময় দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীরা পথ অবরোধ করে। সেই সময় স্থানীয় ব্লক প্রশাসন এই দুই পরিবারকে কর্মতীর্থে অস্থায়ী ঘর দেয় এবং দ্রুত বাড়ি মেরামতের আশ্বাস দেয়। এরপর বন দফতর থেকে জেলাশাসকের দফতর, পঞ্চায়েত অফিসে বারবার আবেদন করেও মেলেনি সাড়া। পরবর্তী সময়ে আরও তিনটি পরিবারের ঠাঁই হয় ওই কর্মতীর্থে। ফলে ক্ষোভে ফুসছে সাঁকরাইল ব্লকের একাধিক বাসিন্দা।
দুই-আড়াই বছরেও কেন হাতির হানায় গৃহহীনরা বাড়ি পায়নি সেই প্রশ্ন তুলে সরব বিরোধীরা। অপরদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শাসকদলের নেতৃত্ব দাবি করছেন ব্যাপারটা তাঁরা জানেনই না।
জঙ্গলমহলে দলমার দাঁতাল হাতিদের দৌড়াত্ব বেশি। ফলে ঝাড়গ্রামে প্রায়ই হাতির হানায় ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, এমনকি প্রানহানির ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রশাসন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু সাঁকরাইল ব্লকের পাঁচটি পরিবার এখনও গৃহহীন হয়ে কর্মতীর্থে উদ্বাস্তু অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন সবদিক থেকেই ব্যর্থ, তাই কর্মতীর্থে উদ্বাস্তুদের ঠাঁই হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ঝুনু বেরাও দাবি করলেন যে পাঁচটি গৃহহীন পরিবার যে কর্মতীর্থে বসবাস করছে সেটা তিনি জানেন না। তিনি এও স্বীকার করলেন যে পঞ্চায়েতের হাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তবে তিনি বন দফতরে কথা বলে পাঁচটি পরিবারের ঘর তৈরির ব্যবস্থা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
ঝাড়গ্রামে দাঁতাল হাতির তান্ডব বরাবরের জন্য একটা ভয়ানক সমস্যা। রাজ্য সরকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও তার সঠিক প্রয়োগ আজও হয়নি বলে অভিযোগ।