নিজস্ব সংবাদদাতা: আট থেকে আশি সবাই তাঁকে চেনেন। তাঁর নামই যেন একটি ব্র্যান্ড। তিনি রাস্তায় বেরোলে হাজার হাজার ভক্ত তার পিছু নেন। তিনি নিজের মর্জি মতো কখনও জাতীয় সড়কে, কখনও রাজ্য সড়কে বা কখনও গ্রামের লোকালয়ে চলতে শুরু করেন। গত পাঁচ বছরের বেশিরভাগ সময় সে কাটিয়েছে ঝাড়গ্রামে। কখনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মানুষজন তাঁর দিকে খাবার এগিয়ে দিয়েছেন। কখনও রাস্তার ধারে আম, কাঁঠাল গাছ থেকে আম, কাঁঠাল পেড়েও খেয়েছে। এবার তাঁর প্রেমে পড়লেন জুন মালিয়া! সে হলো 'রামলাল'।
'রামলাল' জঙ্গলমহলের একটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি। স্থানীয় জঙ্গলমহলবাসী আদর করে তার নাম দিয়েছে 'রামলাল'। আর সেই নামেই দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহল পরিচিত। সে তার আপন মর্জিতে চলাফেরা করে। খিদে পেলে কখনো জাতীয় সড়ক বা রাজ্যসড়কে লরি থামিয়ে সেখান থেকে চাল-ধান-আটার বস্তা নামিয়ে খেয়ে ফেলে। মাঝেমধ্যে ঝাড়গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা। মানুষকে আক্রমণ করা তার স্বভাব বিরোধী। আর সেই সুযোগে মানুষজন উল্টে তাকে বিরক্ত করে। মাঝেমধ্যে এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে রামলালের লেজ ধরে টানতে। আর এমন সময় রামলাল ঘুরে দাঁড়ানোতেই বিপদ ঘটেছে। রামলালের আরও বৈশিষ্ট্য যেখানে ওর ঘুম পায় ও সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। একটু ছায়া বা একটু জঙ্গল হলেই যথেষ্ট তার পক্ষে। ঝাড়গ্রামের একাধিক চাল, আটা মিলগুলিতে প্রবেশ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রামলালের জন্য নাকি ওই মিলের দরজা খোলাই থাকে। যাতে রামলাল তার খাবারের জন্য এক বস্তা চাল-আটা নিতে পারে। এমনও অনেক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যেখানে গোডাউনের একদম ভেতরে রামলাল অনায়াসে প্রবেশ করেছে। কেউ তাকে তাড়ানোর জন্য বিরক্ত করছে না। মিল কর্তৃপক্ষ নাকি রামলালের জন্য দরজা খোলা রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে তাকে দরজা ভাঙতে না হয়। মানুষজনের খুব প্রিয় এই রামলাল। সেই রামলাল এবার মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার প্রিয় হয়ে উঠেছে। ভালোবেসে ফেলেছেন তাকে। শান্ত প্রকৃতির এই রামলালের অনেক ভিডিও নাকি তাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারের শেষ লগ্নে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন গান্ধী ঘাটে 'মেদিনীপুর-খড়্গপুর স্ট্রিট অ্যানিমেল' পশুপ্রেমী সংগঠনের সঙ্গে আলাপচারিতায় জুন মালিয়া জানিয়েছেন, রামলাল তার খুব প্রিয়। মানুষজনও তাকে খুব ভালোবাসে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সাংসদ হলে মেদিনীপুরে একটি অ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার করার চেষ্টা করবেন। যেখানে তাদের চিকিৎসা সহ নানা ব্যবস্থা করা যাবে। তিনি মানুষজনকে বার্তাও দিয়েছেন পথ কুকুরদের খাবার দিতে।
জঙ্গলমহলে নিত্যদিন লেগে থাকে হাতির হানা। ঘরবাড়ি ভাঙার পাশাপাশি ফসল নষ্ট, মানুষের মৃত্যুও ঘটে চলেছে। লোকালয়েও চলে আসছে হাতি। কারণ হাতিদের বাসস্থান অর্থাৎ জঙ্গল কমছে বলেও জানান জুন মালিয়া। পাশাপাশি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের এসইউসিআই প্রার্থী অনিন্দিতা জানা জঙ্গলমহলে প্রচারে এসে বলেছিলেন, এই হাতি সমস্যার সমাধান করা যাবে ময়ূরঝর্ণা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে। তিনি বলেন, "হাতিদের আদি বাসস্থান দলমা পাহাড়ে ডিনামাইট দিয়ে পাথর ভেঙে খনি করে হাতিদের বাসস্থান ধ্বংস করে দিয়েছে। যার ফলে জঙ্গলের হাতি সহ পশুরা অন্য জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছে এবং লোকালয়ে চলে যাচ্ছে।" এই ময়ূরঝর্না প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহলের হাতি সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে বলে দাবি তাঁর। এই দাবিকে সামনে রেখে জঙ্গলমহলে গণ-আন্দোলন সংঘটিত করার কথাও তিনি জানিয়েছেন।