নদী স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন- আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকদের সাফল্য

আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকরা শুধুমাত্র জলের স্রোত ব্যবহার করে সুবর্ণরেখা নদী থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করছেন।

author-image
Debapriya Sarkar
New Update

নিজস্ব সংবাদদাতা : সুবিশাল ড্যাম তৈরি না করেই এবং টারবাইন না ঘুরিয়েই জলবিদ্যুৎ তৈরী করা সম্ভব। নদীর সামান্য স্রোতকে কাজে লাগিয়েই এভাবে জলবিদ্যুৎ তৈরি করে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছেন আইআইটি খড়্গপুরের একদল গবেষক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীতে স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে গত পাঁচ-ছ'মাস ধরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই, এলইডি বাল্ব জ্বালিয়ে প্রাথমিক সাফল্যও অর্জন করে ফেলেছেন গবেষকরা। এরপর, এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্পিড বোট বা মেশিনচালিত নৌকা চালানোর ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের। আগামী ছ'মাসের মধ্যে কেশিয়াড়ির ভসরাঘাট এলাকায় অবস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের 'জঙ্গলকন্যা সেতু'কে এই বিদ্যুৎ দিয়েই আলোকিত করার উদ্যোগও নিয়েছেন গবেষকরা। তারপরই তা স্থানীয় পর্যটনের বিকাশে তথা 'ওয়াটার ট্যুরিজম'-র ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত দুই গবেষক ওঙ্কার ভেঙ্কটইয়াল্লা এবং সৈকত নন্দী। তাঁদের মতে, সৌর বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে জায়গা অনেক বেশি লাগে এবং সূর্যের খামখেয়ালিপনার উপর নির্ভর করতে হয়। আবার, টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে জলের গভীরতা এবং স্রোত অনেক বেশি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ড্যাম তৈরি করতে হয়। ফলে খরচ অনেক বেশি এবং সবজায়গায় এভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব নয়। আর তাই আইআইটি খড়্গপুরের একদল গবেষক বিকল্প পদ্ধতিতে জলবিদ্যুৎ তৈরীর উদ্যোগ নেন। তাঁরা তৈরি করেন এনার্জি হারভেস্টিং মেশিনও। এই মেশিনের সাহায্যে জলের অতি সামান্য স্রোতকে কাজে লাগিয়েও বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব বলে তাঁরা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেন। এই উদ্ভাবনকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্রিটেনের (UK) রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-র সাথে জুটি বাঁধে আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকদের তৈরি হানিলুপ টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা।

publive-image

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লকের ভসরাঘাট এলাকায় সুবর্ণরেখা নদীতে তাঁরা প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সাফল্য অর্জন করেন। নদীর সামান্য স্রোত বা প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ সরলরৈখিক শক্তিকে ঘূূর্ণায়মান শক্তিতে রূপান্তরিত করে এলইডি বাল্ব জ্বালিয়ে দেখেন। তবে, বর্তমানে ওই জায়গার জলস্রোত একটু কমে যাওয়ার কারণে এখন তাঁরা কাজ করছেন অদূরেই আমিলাসাই এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালে আইআইটি খড়্গপুরের গবেষক (রিসার্চ স্কলার) সৈকত নন্দী বলেন, "এই প্রযুক্তিকে বলে ভোর্টেক্স ইনডিউসড ভাইব্রেশন (Vortex-induced vibration/VIV)। জলের স্রোতের মধ্যে যে এনার্জি রয়েছে সেটিকেই কাজে লাগানো হবে। এক্ষেত্রে, জলের গভীরতা মাত্র ৬-১০ ফুট থাকলেই হবে। আর স্রোতের তীব্রতা মাত্র ১.৮-২ কিমি প্রতি ঘন্টা থাকলেই চলে। সর্বোপরি, এটি একটি মোবাইল টেকনোলজি। খুব সহজেই এই এনার্জি হারভেস্টিং মেশিনটি স্থানান্তরিত করা যায়।" এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা তথা হানিলুপ টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ওঙ্কার ভেঙ্কটাইয়াল্লা বলেন, "প্রাথমিকভাবে পর্যটনের বিকাশ ঘটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান এবং কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছি আমরা। নদী থেকেই বিদ্যুৎ তৈরি করে নদী বক্ষে বোট বা নৌকা চালানো সম্ভব। পরবর্তীকালে তা স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের উদ্যোগও নেওয়া হবে।"