নিজস্ব সংবাদদাতা: এবার ট্রানজ্যোতি তিওয়ারি দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ নিয়ে মুখ খুললেন। তিনি মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন এবং বলেছেন, "**বদ্রিনাথ (সত্য যুগ):**
বদ্রিনাথ মন্দির হিন্দু ধর্মের চারধাম যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত এবং বিষ্ণু ভগবানকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বলা হয়, সত্য যুগে এই মন্দিরটি স্বয়ং নারদ মুনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে বিষ্ণু ভগবান তপস্যা করেছিলেন।
**রামেশ্বরম (ত্রেতা যুগ):**
রামেশ্বরম মন্দির তামিলনাড়ুর পবিত্র দ্বীপে অবস্থিত এবং এটি ভগবান শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এটি ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র ভগবান কর্তৃক শিবলিঙ্গ স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা রাবণকে বধ করার পরে তাঁর পাপ মুক্তির জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান।
**দ্বারকা (দ্বাপর যুগ):**
গুজরাটে অবস্থিত দ্বারকা মন্দির দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং মন্দিরটি তাঁর ঐশ্বরিক শক্তির কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বর্তমান মন্দিরটি পরে বিভিন্ন রাজাদের দ্বারা পুনর্নির্মাণ করা হয়।
**পুরী জগন্নাথ (কলি যুগ):**
উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির কলি যুগের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটি ভগবান বিষ্ণুর অবতার জগন্নাথকে উৎসর্গ করা হয়েছে। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কলি যুগে এই মন্দির নির্মাণ করেন, যা এখনও হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এই মন্দিরের বার্ষিক রথযাত্রা বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ।
হিন্দু ধর্মের চারধাম মন্দির—বদ্রিনাথ, রামেশ্বরম, দ্বারকা, এবং পুরী জগন্নাথ—শুধুমাত্র ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। এই মন্দিরগুলির মাহাত্ম্য নির্দিষ্ট স্থান এবং সময়ের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। বদ্রিনাথ সত্য যুগের তপস্যার স্থান, রামেশ্বরম ত্রেতা যুগের ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, দ্বারকা শ্রীকৃষ্ণের দ্বাপর যুগের রাজধানী, এবং জগন্নাথ মন্দির কলি যুগের ধর্মীয় কেন্দ্রীয় স্থান। এগুলোর মাহাত্ম্য সেই স্থানেই বিরাজমান, কারণ এই স্থানগুলোকে হিন্দু ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়।
এই মন্দিরগুলোর নাম অন্য কোনও স্থানে দেওয়া বা সেগুলোর আদলে মন্দির নির্মাণ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। এটি শুধুমাত্র ঐতিহ্যের বিকৃতি নয়, বরং স্থানীয় মানুষের আস্থা এবং ভক্তির প্রতি অসম্মান। এই মন্দিরগুলি নির্দিষ্ট স্থান ও পবিত্রতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, যা অন্য কোথাও অনুকরণ করা সম্ভব নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এগুলি আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু এবং তাদের ধর্মীয় ঐক্যের প্রতীক।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মাহাত্ম্য এবং পবিত্রতা হিন্দু ধর্মের অগণিত ভক্তদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এই মন্দির শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, বরং এটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক উপস্থিতি এবং শতাব্দী ধরে চলে আসা ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। একজন বিধর্মী, যিনি এই মন্দিরের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্য বুঝতে অক্ষম, নিজের খুশিমতো একটি মন্দির নির্মাণ করে সেটিকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নাম দিয়েছেন। এই কাজটি শুধু ঐতিহ্যের বিকৃতি নয়, বরং ভগবান জগন্নাথের প্রতি সরাসরি অবমাননা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যদি সেই আক্রোশ থেকে দীঘায় একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়, তাহলে তা গভীর অসন্মানের প্রতিফলন। এটি মন্দিরের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে হ্রাস করার প্রয়াস এবং হিন্দু সমাজের ধর্মীয় ঐক্যের উপর আঘাত। জগন্নাথ মন্দিরের সাথে যা শুধুমাত্র পুরীর স্থানীয় ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, সমগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আবেগ জড়িত, সেই পবিত্রতার সাথে এমন আচরণ কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ভক্তদের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অবমাননা।"
তার এই বক্তব্যে শোরগোল শুরু হয়েছে।