টোটোয় চড়ে শহর ভ্রমণ বজরঙ্গীর, বিস্ময়কর হনুমানের কীর্তি দেখে হতবাক দুর্গাপুরবাসী

টোটো করে ঘুরে বেড়ানোই শখ। মাঝে মাঝে বার্তালাপ করেন। একটি হনুমানের কথা বলা হচ্ছে। একটু বেশিক্ষণ টোটো বন্ধ করে রাখলে তাঁর বেজায় রাগ হয়। তবে যাত্রীদের কোনওদিন তিনি কিছু করেননি।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
cover durgapur.jpg

নিজস্ব সংবাদদাতা: মুকেশ টোটো চালকের সঙ্গে টোটোয় চড়ে টো-টো করে ঘুরেবেড়ানোই নেশা বজরঙ্গীজির (হনুমান)। নজিরবিহীন যাত্রী টোটো রিক্সায়।  তাও আবার কে..! স্বয়ং বজরংবলী। হতবাক হওয়ার কিছুই নেই। এমনই নজির বিহীন দৃশ্য ধরা পড়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। যাত্রীবাহী একটি টোটো রিক্সায় নিত্যদিন একটি হনুমানকে চড়ে বসে থাকতে দেখেন পথচারী থেকে যাত্রীরা। ওই টোটোতে বসেই স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছেন আবার যাত্রীরাও। তবে যাত্রীদের তো একটা গন্তব্য রয়েছে। কিন্তু তাঁর গন্তব্য বলে কিছুই নেই। সকাল থেকে টোটো রিক্সায় চড়াই তার শখ। টোটো দাঁড় করিয়ে রাখলেই মেজাজ হারায় বজরঙ্গী। টোটোয় চেপে আশপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। ওই টোটোতে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করতেই বজরঙ্গী লাফিয়ে এসে তার সিটের দখল নেয়। যাত্রী থেকে পথচারীরা তাকে মাঝেমধ্যেই খাবার খাওয়ান, আদর করেন। আবার গলা জড়িয়ে ধরলেই মাথায় দু-হাত ভরা আশীর্বাদ করেন বজরঙ্গীজি। স্বয়ং বজরঙ্গবলীর আশীর্বাদ নিতে পথেঘাটে টোটো রিক্সা দাঁড় করিয়ে দেন অনেক ভক্তই। পথচারীরা আবার ভিড় করে দাঁড়িয়ে বজরঙ্গীজি'কে প্রণামও করে।

durgapur 1.jpg

টোটো চালক মুকেশ দত্তের দাবি, ওই হনুমানটিকে সঙ্গে নিয়ে টোটোর যাত্রা শুরু করলে বৌনিটাও বেশ ভালোই হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাবেই চলে আসছে। মুকেশ ও বজরঙ্গীজির অটুট সম্পর্ক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা মুকেশ দত্ত। তিনি পেশায় টোটো রিক্সা চালক। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায়ই হনুমানের দল আসে। কয়েকমাস আগে ওই দল থেকে একটা প্রাপ্তবয়স্ক হনুমান দল ছুট হয়ে যায়। আমাদের এলাকায় সে একাই ঘোরাঘুরি শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা সহ আমিও তাকে খাবার খাওয়াতাম। একদিন দেখি আমি টোটো নিয়ে রোজগারের জন্য বের হতেই আমার টোটোর সিটে এসে বসে পরে ওই হনুমানটি। এর পরে আমি তাকে টোটো থেকে নামানোর জন্য অনেক কৌশল করি। কিন্তু বজরঙ্গীজি কি আর কথা শোনে। চিন্তায় পড়ে যাই আমি। আর হয়তো কোনও যাত্রী আমার টোটোই চড়বেন না। হনুমানটিকে দেখে ভয় পাবে। কোনও উপায় না দেখে হনুমানটিকে  টোটো করে এলাকায় ঘোরাতে নিয়ে যাই। অবাক বিষয় বাড়ি থেকে এলাকার প্রধান রাস্তায় যেতেই দুজন যাত্রী মেলে। তাঁরা নির্দ্বিধায় আমার টোটোতে চড়ে বসেন। এবং গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বলেন। আমার মনে ভয় হলেও বজরঙ্গীজি যাত্রীদের কোনও সমস্যা করেনি। সে নিজের মত ওই দুই যাত্রীদের সঙ্গে ঘুরতে থাকে। কৌতুহলী যাত্রীরাও বজরঙ্গীজির বিষয়ে নানান প্রশ্ন আমায় করতে থাকেন। ওই দিন রোজগারও বেশ ভালোই হয়। এর পরেরদিনও হনুমানটি টোটো বের করতেই আবার আমার টোটোতে চড়ে ঘুরতে বেরিয়ে যায়। এই ভাবেই চলতে থাকে। আমার অর্থ উপার্জনও বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী  থেকে পথচারীরা সবাই বজরঙ্গীজির কাছে নাথা নত করে আশীর্বাদও নেয়। কারও কোনও ক্ষতি করেনি। আর যে যা খাবার দেয় সে খায়। টোটো করে ঘুরেবেড়ানো তার নেশা হয়ে দাড়িয়েছে বর্তমানে। এলাকায় ফিরে এসে  সে নিজের মতো ফের ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। 

durgapur 2.jpg

স্থানীয় এক পথচারী সুভাষ বোষ বলেন, দেখে অবাক লাগছে যে হনুমান আবার টোটোর যাত্রী। প্রায়ই দেখি যাত্রী সহ ওই হনুমানটি টোটোতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শুনেছি হনুমানের বাচ্চা যখন মায়ের কোল থেকে নিচে পড়ে যায়। তখন তার মা বা হনুমানের দল তাকে আর সঙ্গে নেয় না। সেই বাচ্চা হনুমানটি লোকালয়ে বেড়ে ওঠে। সেই সময় সে মানুষের মত চালচলন শুরু করে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে অনুমান করছি। টোটোতে বসে যাচ্ছে তো মনে হচ্ছে মানুষের মত অবিকল এক যাত্রী যাচ্ছে। নজিরবিহীন দৃশ্য একেবারেই।