নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনার তৃতীয় দিনেও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা গেল মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। কাল সকাল থেকেই পুরো হাসপাতাল জুড়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। গ্রিন করিডর করে মেদিনীপুর হাসপাতাল থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হল আশঙ্কাজনক দুই প্রসূতিকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসুস্থ প্রসূতিদের স্বাস্থ্য নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। রবিবারই গ্রিন করিডর করে মাম্পি সিং, নাসরিন খাতুন-কে নিয়ে যাওয়া হলো এসএসকেএম হাসপাতালে, সূত্রের খবর এমনটাই। এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৩টি ‘লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুল্যান্স’ পৌঁছায়। সেই অ্যাম্বুলেন্সে করেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সদের টিম রয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে হাসপাতালে গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি সহ মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়াতে গেলে পুলিশ তা ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। দীর্ঘক্ষণ ধস্তাধস্তি চলে বিজেপির সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো বন্ধ রাখতে হয় বিজেপিকে। হাসপাতালের অপর গেটে হাজির হয় বাম যুবকর্মীরা। ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই ঐক্যবদ্ধভাবে বন্ধ থাকা হাসপাতাল সুপারের অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখায়। পরে হাসপাতালে কোনও আধিকারিককে না পেয়ে সুপারের রুমের সামনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সেখান থেকে হাসপাতাল চত্বরে মিছিল করে বেরিয়ে বটতলাচক এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে। নেতৃত্বে ছিলেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী। কোতয়ালী থানায় হাসপাতাল সুপারের নামে এফআইআরও করে তারা। রোগী মৃত্যুর ঘটনা পরিকল্পিত ও চরম গাফিলতির অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে। মীনাক্ষী বলেন, "এই ঘটনা চরম নির্মমতা ও চরম গাফিলতির। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কঙ্কালসার চেহারা সামনে উঠে এসেছে। এই হাসপাতাল সুপারের পদে থাকার কোনও যোগ্যতা নেই। এই ঘটনার দায় তার। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের দাবি করে আমরা তার নামে এফআইআর করেছি। সেই সাথে তার সাথে দেখা করতে গিয়ে কেউই আমরা দেখা পাইনি। তাই তার অফিসে আমরা তালা ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছি।"
উল্লেখ্য, গত বুধবার মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে পাঁচ প্রসূতির অপারেশন শেষ করে স্যালাইন দেওয়ার পর সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছে এক প্রসূতির। সংকটপূর্ণ আরও দুজন। এই ঘটনায় মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়া হয়েছে এবং তার জেরে গন্ডগোল- এমন অভিযোগ উঠেছে। তারপরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে সেই স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। তাই প্রতিটি রোগীকে বাইরে থেকে নিজ খরচে স্যালাইন কিনে আনার অনুরোধ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সমস্ত পরিস্থিতি পরিদর্শনে রবিবার বিকেলে সেখানে হাজির হন মেদিনীপুরের সাংসদ জুন মালিয়া। মুখ্যমন্ত্রী সবটাই দেখছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। হাসপাতালে স্যালাইন কিনে ঢোকার সময় ঝাড়গ্রাম থেকে আগত দিবাকর মুনিয়ান নামে এক রোগীর পরিবারের লোক বলেন, "আমার নাতনির বুকে কফ জমে সমস্যা হয়েছে। স্যালাইনের প্রয়োজন ছিল। সেখানে ডাক্তাররা জানিয়েছেন হাসপাতালে সরবরাহ করা স্যালাইন দিতে পারি, তাতে আপনাদের মুচলেকা লিখে দিতে হবে, সমস্যা হলে আমাদের কোনওভাবে দায়ী করা হবে না। না হলে বাইরে থেকে কিনে আনতে পারেন। তাই আমরা বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে এনে ডাক্তারদের দিচ্ছি।" একইভাবে মাতৃমা-বিল্ডিংয়েও অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রেও বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে দিতে হচ্ছে। জুন মালিয়া বলেন, "পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে কারুর গাফিলতি প্রমাণিত হলে। পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন। তবে আপাতত রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দিতে হচ্ছে। সবটাই স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তবে আমি এখানে যা দেখেছি সবটাই আবার মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।"