নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক : ৯ জন চাকরিপ্রার্থী খুঁজে দিলে ফ্রিতে নিজের চাকরি হবে। একটি ভুয়ো নিয়োগ চক্রের ওই অফারে সাড়া দিয়ে সর্বস্ব খোয়ালেন মহিষাদল থানার চণ্ডীপুর গ্রামের এক যুবক। তিনি পরিচিতদের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা তুলে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু কারও চাকরি হয়নি। এখন তারা টাকা ফেরতের জন্য লাগাতার চাপ দিচ্ছেন। কিছু জমি বিক্রি করে অল্প টাকা ফেরত দিয়েছেন। তা নিয়ে সংসারে অশান্তি। তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন স্ত্রীও। এই পরিস্থিতিতে অসহায় ওই যুবক মহিষাদল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মহিষাদল থানার লক্ষ্যা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীপুর গ্রামে ওই যুবকের বাড়ি। ফেসবুকে বিশ্ববাংলা লোগো দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত পোস্ট তার নজরে আসে। এরপর তিনি ইনবক্সে যোগাযোগ করতেই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর পান। প্রতারকরা মহিষাদলের ওই যুবককে কলকাতার দমদমের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠায়। ৯ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা তুলে দিলে বিনা ডোনেশনে নিজের চাকরি হবে বলে টোপ দেয়। তাদের কথায় ওই যুবক প্রভাবিত হন। তিনি গ্রামে ফিরে নিজের পরিচিত যুবকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে মোট ২০ লক্ষ টাকা তুলে জমাও করেন। গ্রু-ডি চাকরির জন্য এত টাকা জমা করার পরেও কোনও নিয়োগপত্র আসেনি। ২০২২ সাল পর্যন্ত দু'পক্ষের যোগাযোগ ছিল। তারপর অভিযুক্ত ফোন ধরছিল না। এদিকে কাজের আশায় দেওয়া টাকা ফেরতের জন্য স্থানীয় যুবকরা তাকে চাপ দিতে থাকে। তাদের কেউ কেউ টাকার জন্য বাড়িতেও চলে আসছিল। তা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি চরমে ওঠে। এই অবস্থায় কিছু জমি বিক্রি করে অল্প পরিমাণ টাকা ফেরতও দেন। তারপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মহিষাদল থানায় এফআইআর করেন তিনি। অভিযোগকারী যুবক নির্মাণ শ্রমিক সরবরাহের কাজ করেন। এজন্য ফেসবুকে নিয়মিত চোখ রাখতেন। কোথায় কোন সংস্থার শ্রমিক প্রয়োজন সেটা দেখে নিতেন। এভাবেই ফেসবুক দেখতে গিয়ে একসময় ভুয়ো নিয়োগ চক্রের খপ্পরে পড়েন। অভিনব কায়দায় তাকে দিয়ে এলাকার অন্যান্যদের কাছ থেকে টাকা তোলানো হয়। তারপর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় অভিযুক্ত। ওই যুবক বলেন, ''আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ন'জন টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। তাদের থেকে টাকা চেয়ে চাপ আসাটা স্বাভাবিক। এনিয়ে আমার সংসারেও অশান্তি চরমে। রেগে স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমি ৬ সেপ্টেম্বর মহিষাদল থানায় এনিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু, পুলিশ কিছু করেনি। পুলিশ সুপারের অফিসে যাব। অভিযুক্ত আরও অনেকের ক্ষতি করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আর্জি জানাব।'' মহিষাদল থানার ওসি প্রলয় চন্দ বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।