নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। আতঙ্কে বাড়িতে থাকতে পারেন না শিল্পাঞ্চলের ধস কবলিত এলাকার বহু পরিবার। ঘর হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেই ঘর বর্তমানে চোরদের দখলে। ভেঙে নেওয়া হচ্ছে দরজা জানলা ।১৩ বছর কেটে গেলেও পুনর্বাসন আজও মেলেনি ধস কবলিতদের। বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ধসপ্রবন এলাকায় আতঙ্কের দিন রাত্রি কাটাচ্ছেন জামুড়িয়ার ছাতিমডাঙা এলাকার মানুষজন।
২০১১ সালে ভয়ঙ্কর ধস নেমেছিল এই ছাতিমডাঙায়। আস্ত একটা বস্তি ঢুকে গেছিল মাটির তলায়। গাছপালা, ঘরবাড়ি, গাড়ি সব ঢুকে গেছিল। মারা গেছিল ৫ জন। গ্রামের মানুষদের ঠাঁই হয় ইসিএলের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ওই ভগ্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই ধস কবলিতরা ছিলেন ১০ বছর। বছর দুয়েক আগে ছাতিমডাঙার বেশকিছু পরিবার পুনর্বাসন পায়। তাঁদের জামুরিয়ার বিজয়নগরে ধস পুনর্বাসনের আবাসনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু আরও অনেক পরিবারের হাতে পুনর্বাসনের কার্ড থাকা সত্ত্বেও মেলেনি পুনর্বাসনের আবাসন। অন্যদিকে ধস পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের দাবি কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় আটকে আছে পুনর্বাসন আবাসন নির্মাণের কাজ। আবাসন তৈরি হলেই ছাতিমডাঙার বাকী ধস কবলিতদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। দাবি আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
ধসের ওই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পরে পুনর্বাসনের পেয়েছেন আংশিক ধস কবলিতরা। তবে জামুড়িয়ার ছাতিমডাঙা ধসে কেউ ঘর হারানো, কেউবা পরিবার হারানো মানুষেরা এবার স্থায়ীভাবে মাথার গোঁজার জায়গার দাবি তুলেছেন। জামুড়িয়ার শ্রীপুরের ছাতিম ডাঙায় প্রায় ৩০০ পরিবারের বসবাস। সবাই ধসকবলিত এলাকায় বাস করেন। এমনই ১৫৫ টি পরিবারের হাতে ঘরের চাবি, মালিকানার কাগজপত্র ও দশ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই ১৫৫ পরিবারকে জামুরিয়ার বিজয়নগরে নবনির্মিত আবাসনের মালিকানার চাবি, কাগজ ও দশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তৎকালীন জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ,পুলিশ কমিশনার সুধীর কুমার নীলকান্তম সহ অন্যরা।
আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি জামুড়িরোরয়া, বারাবনি অণ্ডালে পুনর্বাসন প্রকল্পে আবাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তারমধ্যে প্রায় হাজার চারেক আবাসন প্রস্তুত হয়েছে। আরও বেশ কিছু আবাসন অসম্পূর্ণ অবস্থায় আছে। কিন্তু কয়লা মন্ত্রক এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এরমধ্যে ২৫০ কোটি টাকা অন্ডালের দক্ষিণখন্ড সহ একাধিক জায়গায় জমি কিনে আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে দিয়েছে কয়লা মন্ত্রক। রাজ্য স্বরাস্ট্র সচিব তাদের চিঠি দিলেও ওই টাকা তারা দিচ্ছে না। এর ফলে এই প্রকল্পে কাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। পাশাপাশি অভিযোগ অনেকে নাকি বিজয়নগরে যেতে চাইছেন না। এটাও একটা সমস্যা।
এদিকে রাজ্য কেন্দ্র টানাপোড়েনে বিপদ মাথায় নিয়ে ছাতিম ডাঙায় পড়ে রয়েছেন বাসিন্দারা। এমনকি ধস কবলিত পরিত্যক্ত অবাসনেই চলছে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র। এদিকে এলাকায় একের পর এক খনিতে ধস নামছে ও আগুন লাগছে।বিপদে পড়ছেন খনি এলাকার মানুষজন। যেন আরেক যশীমঠের মত ঘটনায় অপেক্ষা করছেন জামুরিয়া রানীগঞ্জের ধসকবলিতরা।
কেন্দ্র ও রাজ্যের টানা পোড়েন, ১৩ বছরেও মিলল না পুনর্বাসন প্রকল্পের বাড়ি
১৩ বছর আগে এই খনি এলাকায় ধসে মাটির তলায় ঢুকে গিয়েছিল আস্ত একটা বস্তি। তারপর থেকেই স্থান হয়েছে স্থানীয় ভেঙে পড়া একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু ১৩ বছর কেটে গেলেও এখনও মেলেনি পুনর্বাসনের বাড়ি।
New Update