নিজস্ব সংবাদদাতা: রয়েছে স্কুল, রয়েছে দুই জন শিক্ষক, পড়ুয়া মাত্র ৮ জন! খাতা কলমে আটজন পডুয়া, তবে তারা স্কুলে আসেনা, স্কুলে আসে মাঝে মধ্যে এক থেকে দুই জন। মিড ডে মিলের খাবারে ডিম দেওয়া হবে whatsapp গ্রুপে জানানো হলেও ছাত্রছাত্রীরা আসে না। তাই বন্ধ থাকে মিড ডে মিলও।
সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অভিভাবকেরা, ঝোঁক বাড়ছে বেসরকারি স্কুলে। এমনই জানাচ্ছেন এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে স্কুল শিক্ষকেরা। এমনই ছবি ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার ঘোষকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৬৭ সালে এলাকার মানুষের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে তৎকালীন সময়ে গ্রামে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হয়েছিল। স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল বেশ ভালোই।
তবে সময়ের সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তেমনই এখন সরকারি বিদ্যালয় ছেড়ে বেসরকারি স্কুলে ছোট্ট স্কুল পড়ুয়াদের পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায় অভিভাবকেরা। যার জন্য গ্রামে বেশ কিছু স্কুল পড়ুয়া থাকলেও অনেকেই সরকারি স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত হয়নি। স্কুল বাঁচিয়ে রাখতে স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে গ্রামের কিছু মানুষের সহযোগিতায় ঘোষকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ জন পড়ুয়া ভর্তি হলেও সকলেই স্কুল-মুখো হয় না। কারণ গ্রামবাসীদের ধারণা সরকারি স্কুলের থেকে বেসরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ভালো হবে।
ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে স্কুলের এমন পরিস্থিতিতে দুঃশ্চিন্তায় শিক্ষকেরা। স্কুলের প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীর চারটি শ্রেণীকক্ষ থাকলেও তিনটিতেই তালা পড়েছে। একটি কক্ষে কোনো দিন তিনজন আবার কোনো দিন এক-দু’জন পড়ুয়া উপস্থিত হলে সেখানেই তাদের পড়াশোনা হয়। মিড ডে মিলের জন্য রয়েছে আলাদা কিচেন রুম থেকে শৌচাগারও। পড়ুয়ার অভাবে একপ্রকার তালা দেওয়া থাকে কিচেন রুমেও। স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন তারা তাদের সাধ্যমত স্কুল ছাত্রদের সঠিক শিক্ষা দেন। তাই বেসরকারি না সরকারি স্কুলে আসুক ছাত্র-ছাত্রীরা, স্কুল বেঁচে থাকুক, এমনটাই চান শিক্ষকরা।
আর গ্রামের মানুষজনদের দাবি বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছে। আগামী দিনে অভিভাবকদের এমন মানসিকতা আরও বৃদ্ধি পেলে এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্যতে ঠেকবে। তবে স্কুলের শিক্ষক থেকে গ্রামের অভিভাকদের একাংশের ভিন্ন দাবি। তাদের মতে, গ্রামে প্রাথমিক স্কুলে পঠনপাঠন থেকে পরিকাঠামো ভালোই রয়েছে। কিন্তু গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না।
/anm-bengali/media/media_files/2025/02/27/eUWZYJ1L8DVjHdcRXDmZ.jpeg)
বর্ষার মরশুমে বন্যার সময় নদীর জল বাড়লে প্রায় মাস তিনেক গ্রামের মানুষের অন্যত্র যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ঘোষকিরা গ্রামে শিলাবতী নদীর উপর থাকা কাঠের সেতুর বর্তমানে বেহাল অবস্থা। কাঠের সেতুর একাংশ ভেঙে ঝুলছে। বন্যার সময় নদীর জলে ডুবে যায় সেই সেতু। সেতু মেরামত অথবা স্থায়ী ব্রীজের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার এহেন হাল দেখে গ্রামের অনেক পরিবার ধাপে ধাপে গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে সেখানকার বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে পঠনপাঠন করাচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, ঘোষকিরা গ্রামের বসতি আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গিয়েছে। বর্তমানে ৪০-৪৫ টি পরিবারের বসবাস রয়েছে গ্রামে।
এবিষয়ে চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানিয়েছেন, “ঘোষকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা কম আছে। দুজন শিক্ষক রয়েছে যারা ভালো করেই পড়াশোনা করান। কিন্তু ওই গ্রামের অভিভাবকদের মধ্যে বেসরকারি স্কুলে ছেলে মেয়েদের পড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ঘোষকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে স্কুল মুখো করতে পারি”।
/anm-bengali/media/media_files/2025/02/27/vV6e2gydr3RtsvSXrDSy.jpeg)