ধস কবলিত হরিশপুর: ইসিএল সিএমডি সতীশ কুমারের পরিদর্শনে গ্রামবাসীদের পুনর্বাসন দাবি আরও জোরালো

ইসিএল সিএমডি সতীশ কুমার ঝাঁ হরিশপুর গ্রামে ৪ বছর পর পরিদর্শনে এসে স্বীকার করেছেন, গ্রামে বসবাস করা বিপদজনক। গ্রামবাসীরা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

author-image
Debapriya Sarkar
New Update

নিজস্ব সংবাদদাতা : ধস কবলিত গ্রাম হরিশপুর এ দীর্ঘ চার বছর পর এলেন ইসিএল এর সি এম ডি সতীশ কুমার ঝাঁ। ধস প্রবণ হরিশপুর গ্রাম বসবাসযোগ্য নয়, বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। বাসিন্দাদের অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত, হরিশপুর গ্রাম পরিদর্শনে এসে এমন আশঙ্কার কথাই জানালেন ইসিএলের সিএমডি সতীশ কুমার ঝাঁ। অন্যদিকে গ্রামবাসীরা চাইলেন উপযুক্ত পুনর্বাসন।

publive-image

সালটা ছিল ২০২০-র ১৪ই জুলাই। হঠাৎ বিকট শব্দের কেঁপে ওঠে এলাকা, গ্রামের মানুষেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ততক্ষণে গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা ধসের কবলে। ঘটনাটি ঘটে অন্ডালের হরিশপুর গ্রামে। আতঙ্কের গ্রামে মানুষ এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। সকাল হতেই চিত্র পরিষ্কার হয় গ্রামের। দেখা যায় অধিকাংশ জায়গা ধসের কবলে চলে গিয়েছে। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে গ্রামে আসার প্রধান রাস্তাটিও ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে জাতীয় সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গ্রাম। গ্রামের অদূরেই রয়েছে ইসিএল এর একটা মুখ খোলা খনি। সেই খনি থেকে কয়লা উৎপাদনের জন্য বিস্ফোরণ ঘটানো হলে, সেই বিস্ফোরণের কারণেই এলাকায় ধস নামে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। অভিযোগে বিক্ষোভে সামিল হয় পুরো গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষদের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ফের ২০ শে জুলাই আবার ধসের ঘটনা ঘটে এলাকায়। ধসের কবলে পড়ে বহু বড় বড় কংক্রিটের বিল্ডিং। সেই মুহূর্তে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। ঘটনাস্থলে প্রশাসনিক আধিকারিকরা গেলে তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রা।

publive-image

এরপর কেটেছে ৪ বছর গ্রামের মানুষরা সেই তিমিরেই রয়েছেন। ধস কবলিত এলাকা হরিশপুর কে নিয়ে শাসক বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের লোকেরাই করে এসেছেন রাজনীতি, এমনটাই স্থানীয়দের অভিযোগ। গ্রামের মানুষদের একটাই দাবি ছিল সঠিক পুনর্বাসন, যা আজও হয়ে ওঠেনি। ধসের আতঙ্কে সেই মুহূর্তে গ্রামের মানুষজন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আত্মীয়র বাড়িতে আর কতদিন থাকা যায়? ফের মাস মাঝখানেক পর একে একে গ্রামের মানুষরা গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই ফের বসবাস করতে শুরু করেন ভাঙ্গা জীর্ণ বাড়িগুলিতেই। গ্রামের মানুষরা পুনর্বাসনের দাবিতে বহুবার জাতীয় সড়ক অবরোধ, ইসিএল এর দপ্তর এ বিক্ষোভ করেছেন, এমনকি ২০২১ এর বিধানসভা ও লোক সভা ভোট বয়কট করে হরিশপুর গ্রামের মানুষ। কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজে নি। আজও গ্রামের মানুষ জীবনে ঝুঁকি নিয়েই জীর্ণ ভাঙাচোরা বাড়িতে বাস করছেন। যেকোনো সময় বাড়ি ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা এবং তার দায় ইসিএল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে বলে দাবি করেন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। রবিবার ধস কবলিত গ্রাম হরিশপুর পরিদর্শনে এলেন ই সি এল এর সিএমডি শ্রী সতীশ কুমার ঝাঁ। তিনি গ্রাম তিনি গ্রাম পরিদর্শন করে নিজের মুখে স্বীকার করলেন গ্রামে থাকাটা বিপদজনক। গ্রামবাসীদের নিজের জীবন বাঁচাতে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের তৈরি করা বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবেদন জানালেন। পাশাপাশি তিনি জানান ইসিএলও গ্রামের মানুষের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দা অমিতা মন্ডল ও শুভঙ্কর চৌধুরীরা জানান। তারা পুনর্বাসনস্বরূপ গ্রামের বদলে গ্রাম চান। কোনও আসানসোল দুর্গাপুর - উন্নয়ন পর্ষদের ফ্ল্যাটে যেতে চান না। গ্রামবাসীদের একাংশের প্রশ্ন থেকেই গেল তাহলে ইসিএল এর সিএমডির পরিদর্শনের পরও কি জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের দামে থাকতে হবে? নাকি গ্রামবাসীদের দাবি মেনে নিয়ে গ্রামের বদলে গ্রাম তৈরি করে গ্রামের মানুষের জীবন বাঁচাতে সদর্থক ভূমিকা নেবে ইসিএল।