নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পতিতালয়ের মহিলাদের সমাজে নিচু চোখে দেখা হয়। কিন্তু জানেন কি তাদের পতিতালয়ের মাটি ছাড়া দেবী দুর্গার মূর্তি গড়ার কাজ সম্পন্ন হয় না। এর কারণ জানেন ? আসুন জেনে নিই এর আসল কারণ।
প্রকৃতির বিশেষ একটি অংশই নারী। এই নারী মানেই মা, এই নারী মানেই কন্যা। এরা কখনও অশুচি, অপবিত্র হ'তে পারেন না। এদের পতিতাবৃত্তির মূলেই রয়েছে পুরুষের লোভ ও লালসাপূর্ণ লোলুপ দৃষ্টি। এই পবিত্র নারীজাতিকে বিপথে চালিত করার পিছনে রয়েছে সীমাহীন পুরুষের কামাভিলাস।
পুরাণ মতে, একবার ঋষিবর বিশ্বামিত্র ইন্দ্রের সমান ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন। ইন্দ্র কোনোভাবেই তাকে বিরত করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়েই তিনি স্বর্গের অপ্সরাকে পাঠালেন। কঠোর তপস্যা রত বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হলো। কামাতুর বিশ্বামিত্র মেনকায় লুব্ধ হল। ইন্দ্রের ইচ্ছা পূর্ণ হল। এখানে মেনকা যদিও অষ্টসতীর কেউ নন, তবুও তিনি নারীজাতির প্রতিনিধি তো বটে। ঋষির লোভাতুর কামুক দৃষ্টিই তাকে সর্বনাশের পথে এগিয়ে দিল। মেনকা নিষ্কলুষ অবস্থায় স্বর্গে চলে গেলেন।
যে নিজে বিষ ধারণ করে, তাকেই সম্মান জানানোই সামাজিক রীতি। কাজেই, দুর্গা প্রতিমা গড়ার মধ্যে থাকবে গম্ভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও পতিতালয়ের মাটি - এই চারটি মূল উপাদান। তাই মনে রাখতে হবে, যে পুরুষ পতিতালয়ে যায়, সে তার কয়েক জন্মের পুণ্যের অর্জিত ফল রেখে আসে পতিতালয়ে, বিনিময়ে সে বহন করে আনে পাপ। সুতরাং পতিতাবৃত্তি যারা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, তারা অর্জন করলো পুরুষের অর্জিত পুণ্য।
মহামায়ার যে নবরূপ বর্ণনা করা হয়েছে, সেই নবরূপগুলোর নবতম রূপই হলো পতিতা। ধর্মবেত্তাদের জন্য সেই নয়টি রূপের নাম নিচে দিলাম।
(১) নর্ত্তকী / অভিনেত্রী, (২) কাপালিক, (৩) ধোপানী, (৪) নাপিতানী, (৫) ব্রাহ্মণী, (৬) শূদ্রাণী, (৭) গোয়ালিনী, (৮) মালিনী এবং (৯) পতিতা।
" অভিষিক্তা ভবেৎ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে " । মহানির্বাণতন্ত্র।
" পূর্ণাভিষেকো দেবেশি দশ বিদ্যাবিধোস্মৃত "। কুলার্ণবতন্ত্র।
অর্থাৎ দশ মহাবিদ্যার অধিকারী উপাসকগণই, অন্যেরা নহে।
পূর্ণাভিষেক মন্ত্রচৈতন্য হওয়ার ফলে যিনি দেবত্বে উন্নীত হয়েছেন, এরকম অভিষিক্তা আর কখনও বেশ্যা থাকে না। তিনি দশবিদ্যার অধিকারী। যেখানে তারা থাকেন, সেই প্রবেশ দ্বারের মাটিকে পুণ্যমাটি বলা হয়।